গত সোমবার থেকে শুরু হয়েছে কুম্ভমেলা। শেষ হবে ২৬শে ফেব্রুয়ারি। প্রথম দিন থেকেই ভক্তদের ভিড় উপচে পড়েছে। দেশ-বিদেশ থেকে বহু ভক্তের সমাগম হয়েছে। কুম্ভ মেলার বেশ কয়েকটি ঘটনা ইতিমধ্যেই সকলের নজর কেড়েছে। তবে স্ত্রীকে ভ্যানে চাপিয়ে কুম্ভমেলায় নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ইতিমধ্যেই অবাক করে দিয়েছে নেট নাগরিকদের।
বাঁকাচাঁদ পেশায় দর্জি। তার আসল নাম দুলাল বিশ্বাস। তবে বাঁকাচাঁদ নামেই ডাকেন সবাই। অভাব-অনাটনই নিত্য সঙ্গী। কৃষ্ণনগরের হাই স্ট্রিটে তার দর্জির দোকান ছিল। প্রতি রবিবার নিয়ম করে সাইকেল প্রেমিক বন্ধুদের সাথে ৪০ থেকে ১০০ কিলোমিটার পথ ভ্রমণ করেন। পাশাপাশি ঘোরতর প্রকৃতি প্রেমিক বাঁকাচাঁদ। সারাবছর সাইকেলে চড়ে আশেপাশের ফসল, জমি, পুকুর, পাখি, গাছ ইত্যাদি দেখে বেড়ান।
এর পাশাপাশি বাঁকাচাঁদ যুক্ত স্বেচ্ছাসেবক দলের সাথে। কৃষ্ণনগরের জলঙ্গী, অঞ্জনা নদী বাঁচাও আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা নেন বাঁকাচাঁদ। অভাবের জন্য বেশিদূর পড়াশোনা করতে পারেননি তিনি। শিক্ষিত হওয়ার জন্য পুঁথিগত শিক্ষায় যে একমাত্র পথ নয়, তার জলজ্ব্যান্ত উদাহরণ বাঁকাচাঁদ। ইতিমধ্যেই, অনেকের শিক্ষাগুরু হয়ে উঠেছেন তিনি।
সাইকেল অভিযানের একদম সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন বাঁকাচাঁদ। কুম্ভমেলাতেও তার অন্যথা হবে না। তীর্থ করতে নয় বরং নদী বাঁচাও, পরিবেশ বাঁচাও, জল সংরক্ষণ করো- এসব বার্তা মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ায় মূল উদ্দেশ্য বাঁকাচাঁদের। তার মতে, তিনি বছরভর এই পরিবেশ বাঁচানোর জন্য সংগ্রাম করে থাকেন। কুম্ভ অভিযানও তারই একটি অঙ্গ।
আরও পড়ুন: সাফাইয়ের খরচ দিলেই পাওয়া যাবে ট্রেড লাইসেন্স, নতুন উদ্যোগ কলকাতা পুরসভার
তবে স্ত্রীকে ভ্যানে চাপিয়ে কুম্ভমেলায় নিয়ে যাওয়াই প্রথম নয়, এর আগেও স্ত্রীকে নিয়ে গঙ্গাসাগর ভ্রমণ করেছেন বাঁকাচাঁদ। ঘুরে এসেছেন কামরূপ-কামাখ্যাও। তার মতে ট্রেন বা বাসে চড়ে ঘুরলে নিজের মত কিছু দেখা যায় না। খরচও অনেক বেশি হয়। তাই এই সাইকেল চড়ে দেশ ঘুরতেই বেশি ভালোবাসেন বাঁকাচাঁদ। তার সাইকেল রিক্সাটিও সুন্দরভাবে সাজানো হয়েছে। ১২ বছর আগে কামাখ্যা যাওয়ার সময়েই ভ্যান রিক্সার ওপর গ্রিল ঘেরা বক্সের শেড বানিয়ে দিয়েছিল বন্ধুরা।
এবার স্ত্রীকে সেই ভ্যানে চাপিয়ে কুম্ভমেলায় যাচ্ছে বাঁকাচাঁদ। “সেভ জলঙ্গী” নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা তাঁর রিকশায় ‘নদী বাঁচাও, মাটি ও জল বাঁচাও, গাছ লাগাও, পরিবেশ বাঁচাও, দূষণকর প্লাস্টিক বর্জন করো, বাই সাইকেল চালাও’ -এ সব বার্তার ফ্লেক্স আটকে দিয়েছেন। অডিও ক্লিপের মাধ্যমেও এই একই বার্তা দেওয়া হয়েছে। এসব ব্যবস্থা অত্যন্ত খুশি বাঁকাচাঁদ।