প্রথম দিনেই খননকার্য বন্ধ, দেউচা-পঁচামির বিক্ষুব্ধ আদিবাসীরা

গত বুধবার বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, দেউচা-পঁচামি কোল ব্লকে প্রচুর পরিমাণে কয়লা ও ব্যাসল্ট শিলা রয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকেই এখানে খননকার্য শুরু করা হবে। কয়লা শিল্প উন্নয়নের ক্ষেত্রে এই কোল ব্লক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সূত্রের খবর অনুযায়ী, এই প্রকল্পের জন্য ৩৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগও করা হয়েছে সরকারের তরফ থেকে।

মুখ্যমন্ত্রীর কথা মত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লা খনি দেউচা-পঁচামির খননকার্য শুরু করা হয়। এক্ষেত্রে কয়লা উত্তোলনের আগে ব্যাসল্ট শিলা খননের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। তাই জন্য মথুরাপাহাড়ি ও দেওয়ানগঞ্জ এলাকায় বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়ন করা হয়েছিল। কিন্তু এদিন জেলাশাসক সহ প্রশাসনিক কর্তারা পৌঁছাতেই আদিবাসীরা বিক্ষোভ শুরু করে। প্রশাসনিক কর্তাদের বাধা দেন বিক্ষোভকারীরা। এমনকি খননের জন্য যে জেসিবি আনা হয়েছিল, সেটিও আটকে রাখেন গ্রামবাসীরা। গ্রামের মহিলারাও এই দিন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিক্ষোভে সামিল হন। ফলে এক চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় ওই এলাকায়।

আগে সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছিল, কয়লাখনির কাজে এলাকাবাসীদের নিয়োগ করা হবে। জমির বদলে গ্রামের মানুষদের চাকরি দেওয়া হবে। কিন্তু সরকার তার কথা রাখেনি। তাই গ্রামবাসীরা প্রথম দিন থেকেই দেউচা-পঁচামির খননকার্য বন্ধ করে দেয়। দেউচা-পচামিতে কয়লাখনি হলে ২১ হাজার মানুষকে অন্যত্র সরাতে হবে। তাছাড়াও বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল, জলাভূমি ইত্যাদি ধ্বংস করতে হবে। তাই গ্রামবাসীদের একাংশ জমি দিতে নারাজ। গ্রামবাসীদের আরেকটি অংশ জমি দিতে রাজি হলেও তাদের দাবি মুখ্যমন্ত্রী যেমন আর্থিক প্যাকেজে ও চাকরির কথা বলেছেন তেমনি দিতে হবে তাদেরকে।

আরও পড়ুন: বাজেটে বিপুল পরিমাণে কর্মী নিয়োগের ঘোষণা করতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার, কোন কোন ক্ষেত্রে নিয়োগ?

এই বিশৃঙ্খলা সামলাতে বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায় ও রাজ্যসভার তৃণমূল সংসদ সামিরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে পৌঁছান। বিক্ষোভকারীদের সাথে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। এদিন জেলাশাসক জানান, দেউচা-পঁচামি কোল ব্লকের কাজ শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই জমিতে কয়লা তুলতে গেলে আগে ব্যাসল্ট রিমুভালের কাজ করতে হবে। আর তাছাড়া এই জমি সরকারি জমি। এখানে জল, জমি কিছুই নষ্ট করা হবে না। খননকার্য চালাতে গিয়ে যে গাছগুলি কাটা পড়বে তার প্রতিস্থাপনেরও ব্যবস্থা করবে প্রশাসন। এই অঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থানান্তরের কাজও ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।

বিশৃঙ্খলার খবর পেয়ে মহম্মদ বাজার ব্লক ও পঞ্চায়েত সমিতির প্রশাসনিক ভবনে পৌঁছন তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডল। তিনি প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন। জেলাশাসক আরো জানান, “ব্যাসল্ট মাইনিংয়ের কাজ এলাকাবাসীরাই করবেন। আশপাশের চার-পাঁচটি গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে কেউ আর্থ রিমুভার আবার কেউ ড্রাইভার বা লেবার হবেন। তাঁদের নাম নথিভুক্তিকরণ প্রক্রিয়া চলছে থানায়৷ মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী প্যাকেজে যা বলেছেন, তাই হবে”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *