কলকাতার মেট্রো যাত্রীদের জন্য সুখবর! এবার মেট্রোর নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হবে এক বিশাল আকৃতির যন্ত্র। তামিলনাড়ুর আলিঞ্জিভাক্কাম থেকে দীর্ঘ ১,৬৫৩ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে কলকাতায় পৌঁছেছে ৯০ মিটার লম্বা এবং ৬৫০ টন ওজনের একটি টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম)।
পার্পেল লাইনের কাজ এগোচ্ছে দ্রুত
কিড্ডারপুর স্টেশন সংক্রান্ত জমি সমস্যার সমাধান এখনও না হলেও, মেট্রো কর্তৃপক্ষ কিড্ডারপুর থেকে পার্ক স্ট্রিট পর্যন্ত ভূগর্ভস্থ টানেল খননের কাজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই টিবিএম মূলত কঠিন পাথর, বালির মাটি, ভেজা বা শুষ্ক মাটির মধ্য দিয়ে সুড়ঙ্গ তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়। উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে সুড়ঙ্গের কাঠামো নির্মাণের কাজ দ্রুত শেষ করা যাবে।
প্রথম ধাপে, সেন্ট থমাস থেকে ভিক্টোরিয়া পর্যন্ত ১.৭ কিলোমিটার টানেল খোঁড়া হবে। এরপর ভিক্টোরিয়া থেকে পার্ক স্ট্রিট পর্যন্ত আরও ৯৫০ মিটার টানেল তৈরি হবে। পার্ক স্ট্রিট থেকে এসপ্ল্যানেডের মধ্যে উত্তর প্রান্তের অংশটি কাট-এন্ড-কভার পদ্ধতিতে নির্মাণ করা হবে।
কী সুবিধা পাবেন যাত্রীরা?
১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মেট্রো করিডোরের মধ্যে প্রায় ৫ কিলোমিটার অংশ থাকবে ভূগর্ভস্থ। এটি জোকা থেকে এসপ্ল্যানেড পর্যন্ত ১২টি স্টেশনের মাধ্যমে সংযুক্ত হবে। তবে, কলকাতা পুলিশের বডিগার্ড লাইনের জমি এখনো অধিগ্রহণ করা না হওয়ায় খিদিরপুর স্টেশন হবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলার প্রথম এসি লোকাল ট্রেন চলবে শিয়ালদহ থেকে কৃষ্ণনগর পর্যন্ত, কত দিতে হবে ভাড়া?
রেল বিকাশ নিগম লিমিটেড (RVNL) ইতিমধ্যে ২,৪৪৭ কোটি টাকার ভূগর্ভস্থ প্রকল্পের জন্য ঠিকাদারি সংস্থা L&T-কে দায়িত্ব দিয়েছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ভিক্টোরিয়া স্টেশন থেকে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে মহেশ্তলার সরকারপুল এলাকায় টানেলের রিং সেগমেন্ট ঢালাইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে প্রায় ৩,০০০ সেগমেন্ট তৈরি হবে, যার প্রতিটির অভ্যন্তরীণ ব্যাস হবে ৫.৮ মিটার। টিবিএমটি ভেঙে ১৭টি ট্রেলারে করে সেন্ট থমাস বয়েজ স্কুলের কাছে নির্মিত শ্যাফটে নামানও হবে। সেখান থেকেই এটি চালু করা হবে।
দেশে তৈরি হচ্ছে টিবিএম
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্পে ব্যবহৃত টিবিএমগুলো জার্মানিতে তৈরি হলেও, নতুন দুটি টিবিএম তামিলনাড়ুতেই তৈরি ও সংযোজন করা হয়েছে। শুধুমাত্র কাটার হেড, ম্যানলক, ম্যাটেরিয়াল লক ও প্রোপালশন সিস্টেম—এই চারটি অংশ বিদেশ থেকে আনা হয়েছে। বাকিটা সম্পূর্ণ দেশীয়ভাবে নির্মিত হয়েছে। এক রেলকর্তার মতে, নতুন টিবিএমগুলোর বেশিরভাগ অংশ দেশেই তৈরি হয়েছে, যা দেশের প্রযুক্তিগত সক্ষমতাকে প্রমাণ করে। এই নতুন যন্ত্রের সংযোজনের ফলে কলকাতা মেট্রোর পার্পেল লাইনের কাজ আরও দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে, যা শহরের যাত্রীদের জন্য নিঃসন্দেহে বড় স্বস্তির খবর।