বসত বাড়ি হল যেকোন মানুষের প্রাণকেন্দ্র। সেই বাড়ির সাথে জড়িয়ে থাকে নানা স্মৃতি। মানুষ বেঁচে না থাকলেও বাড়িতে রয়ে যায় ফেলে আসা সময়ের নানা স্মৃতি এবং সুন্দর মুহূর্ত। তবে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বসতবাড়ি আর অক্ষুন্ন থাকবে না। কেন এই স্মৃতি মুছে ফেলা হচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে বিশ্বভারতীর বহু মানুষ।
আপনকথা’য় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, মানুষের সঙ্গ পেয়ে বেঁচে থাকে বসত-বাড়িটা। তার পুত্র অলোকেন্দ্রনাথ ঠাকুর এক বিঘা জমির উপরে বাড়িটি তৈরি করেছিলেন। নাম দেওয়া হয়েছিল ‘আবাস’। বাড়ি থেকে ঘিরে রয়েছে বহু স্মৃতি এমনকি বাড়ির নাম অনুসারে এলাকার নামকরণ করা হয় অবনপল্লি। শান্তিনিকেতনে অবন ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত সেই ‘আবাস’ বর্তমানে ভেঙে ফেলা হচ্ছে। যদিও সমাজমাধ্যমের পাতায় বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা, আশ্রমিক, বিশ্বভারতীর শিক্ষক ও প্রাক্তনীদের একাংশ। তবে বাড়িটির বর্তমান যিনি মালিক তার সঙ্গে বহু চেষ্টার পরেও যোগাযোগ করা যায়নি।
স্থানীয় সূত্র মারফত জানা গেছে যে, গত শতাব্দীর চল্লিশে এই বাড়িটি তৈরি করা হয়েছিল, একতলায় এই বাড়িটি তার দিয়ে ঘেরা। অবনীন্দ্রনাথের বংশধরেরা জায়গাটি প্রোমোটারকে বিক্রি করেছেন বলে জানা গিয়েছে। এরপরই অবশ্য শুরু হয়ে গেছে বাড়িটি ভাঙার কাজ। হুগলির কোন্নগরের বাগানবাড়িতে ছোটবেলা কেটেছে অবনীন্দ্রনাথের। শান্তিনিকেতনের এই বাড়িতে তিনি দু-একবার এসেছেন। পাঠভবনের প্রাক্তন শিক্ষক ও প্রবীণ আশ্রমিক সুব্রত সেন মজুমদার বলেন, এই বাড়িতে অবন ঠাকুর দুই একবার ঘুরে গেছেন। আজ চোখের সামনে সেটিকে ভেঙে ফেলতে দেখে বড় কষ্ট হচ্ছে। পুরসভাকে তারা অনুরোধ করবে, শান্তিনিকেতন এলাকার ঐতিহ্যপূর্ণ বাড়িগুলি যাতে ধ্বংস করা না হয়।
আরও পড়ুন: ফিরল হুঁশ, এবার কেএমডির অধীনে আসতে চলেছে বানতলা চর্মনগরী
ঠাকুর পরিবারের সদস্য এবং পাশাপাশি প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুরের কথায়, পুরনো ঐতিহ্যকে নষ্ট করে ফেললে যে কোন মানুষেরই খারাপ লাগবে। কিন্তু এক্ষেত্রে কারোর কিছু করার নেই। বিশ্বভারতীর প্রাক্তন কর্মী সমীরণ নন্দী বলেন, ঘটনাটি সত্যি বড় বেদনাদায়ক। হয়তো এভাবেই এক সময়ে রতনপল্লিতে দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত ‘সুরোপুরী’ বাড়িটি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে।
বাড়িটি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য বহু চেষ্টা করা হয়েছে অবীন্দ্রনাথের বংশধরদের সঙ্গে যোগাযোগ করার কিন্তু সফল হয়নি কেউ। এমনকি বহু চেষ্টা করার পরও বর্তমান মালিকের সঙ্গেও দেখা করা যায়নি। বোলপুরের পুরপ্রধান পর্ণা ঘোষ বলেন, বিষয়টি যদিও তার অবগত ছিল না। স্মৃতি বিজড়িত বাড়িগুলির ঐতিহ্য বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে সরকারকেই। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখাতেই ফুটে উঠেছে অনাগত ভবিষ্যতের বিভিন্ন উদাহরণ।