Site icon লোকাল সংবাদ

প্রশ্নের মুখে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত, আরএ পেলেও কিভাবে রাখা হবে পরীক্ষার হলে?

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রতিনিধত্বমুলক

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন রাজ্য এবং জাতীয় বোর্ডগুলি পরীক্ষায় নকল ও টোকাটুকি রুখতে নিচ্ছে কড়া সিদ্ধান্ত। এই পরিস্থিতিতে স্নাতকোত্তরে পরীক্ষা সংক্রান্ত এক নির্দেশিকা ঘিরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তকে ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক জয়ন্ত সিনহা স্নাতকোত্তরের সমস্ত বিভাগীয় প্রধান এমনকি যেসব কলেজে মাস্টার্স পড়ানো হয়, সেখানকার অধ্যক্ষ ও টিচার ইনচার্জদের একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছেন, যেসব পরীক্ষার্থীদের রিপোর্টেড এগেনস্ট (আরএ) হবে তাদের বহিষ্কার কিংবা সাসপেন্ড করা যাবে না।

নির্দেশিকা এইখানেই শেষ নয়। এমনটাও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, ওই পরীক্ষার্থী যতক্ষণ না পর্যন্ত কেন্দ্রের মধ্যে গুরুতর গোলমাল, ভাঙচুর এবং ইনভিজিলেটরদের শারীরিক ভাবে হেনস্থা করছেন, পরীক্ষার হলেই তাকে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনকী ইনভিজিলেটররা সংশ্লিষ্ট পরীক্ষার্থীর খাতায় আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে ‘স্ট্রাইক অফ’ও করতে পারবেন না। এই নির্দেশিকা জারি হওয়ার পর থেকেই রসুনের মুখে পড়েছে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ধরনের নির্দেশিকা নিয়ে রীতিমতো প্রশ্ন তুলেছে বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় প্রধানরা। তারা রীতিমতো চিন্তিত এবং জানিয়েছে যে, আগে নিয়ম ছিল যদি পরীক্ষার হলে কোনও পরীক্ষার্থী নকল বা টোকাটুকি করতে গিয়ে ধরা পড়ে তাহলে পরীক্ষার্থীর থেকে খাতা নিয়ে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে। এই ঘটনার পরে কিভাবে একজন পরীক্ষার্থীকে হলে রাখা হবে সেটাই প্রশ্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর পরীক্ষা সংক্রান্ত নিয়মে এই বদলের ব্যাপারে জানতে পরীক্ষা নিয়ামক জয়ন্ত সিনহাকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এটাই বোর্ড অফ ডিসিপ্লিনের নিয়ম। আরএ হওয়া পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে এমনই আচরণ করতে হবে।

যদি এই নিয়ম পালন করা না হয় তাহলে হবে তা নিয়মবিরুদ্ধ। কলেজ অধ্যক্ষরা বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। হেরম্বচন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ নবনীতা চক্রবর্তী বলেন, স্নাতক প্রথম সেমেস্টারের পরীক্ষার্থীরা কলেজে পরীক্ষা দিতে গেলে তাদের ব্যাগ ক্যাম্পাসের বাইরে রেখে ভিতরে ঢুকতে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে কেন এত বিশেষ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে মাস্টার্সের পরীক্ষার্থীদের? আশুতোষ কলেজের অধ্যক্ষ মানস কবির বিষয়টি নিয়ে মত প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সমস্ত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে আলোচনা করত। সেটার প্রয়োজন বোধায় ফুরিয়ে এসেছে। পরীক্ষা নিয়ামকের এই সিদ্ধান্তে পরীক্ষাকেন্দ্রে ইনভিজিলেটরের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক–শিক্ষিকারা বিপাকে পড়বেন। প্রশ্নের মুখে পড়তে চলেছে তাদের নিরাপত্তা।

আরও পড়ুন: কুতুবমিনার ছাড়িয়ে যাবে হাওড়া টাওয়ার, কবে হবে উদ্বোধন?

একাধিক বিভাগীয় প্রধান পরীক্ষা নিয়ামকের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। আরএ হয়ে যাওয়ার পরে একজন পরীক্ষার্থী কোনভাবেই পরীক্ষার হলে থাকতে পারে না। অন্য পরীক্ষার্থীরা যেখানে উত্তর পত্র লিখবে সেখানে আরএ হয়ে যাওয়া পরীক্ষার্থী কিভাবে লিখবে তা বুঝতে পারছে না কেউ। বিকাশ ভবনের কর্তারাও বলছেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে পরীক্ষার হলে মোবাইল ফোন–সহ কোনও পরীক্ষার্থী এক দিন ধরা পড়লে তার সব পরীক্ষাই বাতিল হয়।

শহর কলকাতার বিভিন্ন সিবিএসই স্কুল দশম ও দ্বাদশের বোর্ড পরীক্ষার্থীদের জুতো খুলে তার ভেতর কিছু আছে কিনা সেটাও চেক করছে। এমনকি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ প্রতি কেন্দ্রে দু’টি করে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে পরীক্ষার্থীদের তল্লাশি করছে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে এত উদাসীন সিদ্ধান্ত নিতে পারে তা ভাবতে পারছে না কেউ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সনাতন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আগে যে কোনও সিদ্ধান্ত ডিপার্টমেন্টাল কমিটিতে (ডিসি) আলোচনার পরে বিভাগীয় প্রধান তাতে সই করে কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতেন। বর্তমানে বিভাগীয় প্রস্তাবনায় সব শিক্ষক–শিক্ষিকাকে সই করতে হয়। এখন বিভাগীয় প্রধানদের ক্ষমতা খর্ব হয়েছে। পরীক্ষা নিয়ামকের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভাগীয় কমিটিতেও আলোচনা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে এখনো বিস্তারিতভাবে কিছুই জানা যায়নি।

Exit mobile version