বহুদিন ধরেই শুনে আসছি বুদ্ধিমত্তার যন্ত্র আবিষ্কারের বিষয়ে। কিন্তু তা কবে আবিষ্কার হবে তা জানা নেই। তবে সাম্প্রতিক সেই বিষয়েই একধাপ অগ্রগতি ঘটলো বিজ্ঞানের। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ‘মেসিন লার্নিং’ সম্ভব করে তোলার চেষ্টা করলেন হপফিল্ড-হিন্টন (Hopfield-Hinton) জুটি। সম্প্রতিক সেই জুটিকেই ২০২৪-এর পদার্থবিদ্যায় নোবেল জয়ী হিসেবে ঘোষণা করলো সুইডিস অ্যাকাডেমী।
প্রসঙ্গত, আমেরিকার প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক হলেন জন যে হপফিল্ড। যিনি AI-এর ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী। অপরদিকে কানাডার জিওফ্রে হিন্টন বর্তমানে গবেষণায় যুক্ত থাকলেও পূর্বে গুগলে কর্মরত ছিলেন। তবে বর্তমানে তিনি টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত এবং ২০২৩ সাল থেকে গবেষণায় নিযুক্ত রয়েছেন। সাম্প্রতিক এই জুটি (Hopfield-Hinton) যন্ত্রের বুদ্ধিমত্তা প্রকাশে নিউরাল কৃত্রিম ব্যবহার করে ‘মেসিন লার্নিং’-এর একটি মডেল তৈরি করেন।
‘মেসিন লার্নিং’ কথার অর্থ হল যন্ত্রের শিখন। অর্থাৎ শিশু বয়স থেকে বাচ্চারা যেমন চারপাশের নানান জিনিস দেখে শুনে যেমন শেখে তেমনি এই যন্ত্রকেও বারংবার নানা ধরনের তথ্য জিনিস দেখিয়ে শেখানো হয়। আর সেই সমস্ত জিনিস যন্ত্রকে শেখানোর জন্যই কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করেন এই জুটি। মানুষের মস্তিষ্কে নিউরোন একত্রিত হয়ে যেমন স্নায়ুতন্ত্র তৈরি হয় তেমনই এই কৃত্রিম নিউরাল নেটওয়ার্কের ‘নোড’ জুড়ে জুড়ে নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়। যা মাধ্যমে যন্ত্র বিভিন্ন ডেটা আত্মস্থ করার ক্ষমতা রাখে। আর সেই পদ্ধতি আবিষ্কার এই পদার্থবিদ্যার মৌলিক ধারণাকে কাজে লাগিয়েছেন এই জুটি। যার জন্য ২০২৪-এ নোবেল প্রাপক হিসেবে মনোনীত হন হপফিল্ড-হিন্টন।
হপফিল্ডের কথায়, বর্তমানের AI-এর প্রসারের সাথে পূর্বযুগের শিল্প বিপ্লবের তুলনা করা যায়। কারণ পূর্বযুগের তৈরি যন্ত্র মানুষের শারীরিক কর্মক্ষমতায় মানুষকে ছাপিয়ে গিয়েছিল। তবে বর্তমানের এই যন্ত্র মানুষকে ছাপিয়ে যাবে বুদ্ধিমত্তাতেও। তবে এই যন্ত্রের আবিষ্কারের কিছুটা আশঙ্কাও রয়েছে। হিন্টনের কথায়, যন্ত্রের এই আবিষ্কারে হেরে যেতে পারে মানুষের বুদ্ধি। যা মানবযুগে অভিশাপ হয়ে উঠতে পারে।
এ প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি, বর্তমানে যত ধরনের নিউরাল নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছে তার নেপথ্যে রয়েছে এই দুই বিজ্ঞানী (Hopfield-Hinton)। উদাহরণ স্বরূপ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রারম্ভে ‘জেনারেটর মডেল’কে প্রাথমিক রূপ দিয়েছেন হপফিল্ড। আবার সেই নেটওয়ার্কেই কাজে লাগিয়ে ‘বোল্টজম্যান মেশিন’ তৈরি করেছেন হিন্টন। যে যন্ত্র স্বাধীনভাবে দুটি ডেটার মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা রাখতে পারে। এছাড়াও হপফিল্ড তৈরি করেছিলেন এমন একটি যন্ত্র যা তথ্য জমা করার পাশাপাশি পুনর্গঠনও করতে পারে। ফলস্বরূপ এই নয়া আবিষ্কারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে হপফিল্ড-হিন্টনের। ফলস্বরূপ ২০২৪-এর এই দুই নোবেল জয়ীকে নোবেল পুরস্কারের পাশাপাশি দেওয়া হবে ১১ বিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা। যার ভারতীয় মূল্য ৮ কোটি ৯০ লক্ষ টাকারও বেশি এবং একটি সনদপত্র।