রবিবার দুবাইয়ের মাঠে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দখলে আনল ভারত। লড়াইয়ের ময়দান কিন্তু এত সহজ ছিল না। রোহিত শর্মার দল অবশেষে প্রতিশোধ নিল ২৫ বছর আগের হারের। তখন অধিনায়ক ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ফাইনালে উঠেও হারতে হয়েছিল নিউজিল্যান্ডের কাছে। গত বছর জুন মাসে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত। ৯ মাসের মধ্যে এত বড় সাফল্য রোহিত শর্মার ভীত আরো মজবুত করলো। কোচ হিসাবে সফল গৌতম গম্ভীর। নিজের প্রথম আইসিসি ট্রফিতেই দলকে চ্যাম্পিয়ন করলেন তিনি। যদিও চলতি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে টস জিততে পারেনি রোহিত শর্মা।
অন্যান্য দিনের মত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালের দিনেও টসে জিততে পারেননি তিনি কিন্তু তাতে ভারতকে সমস্যায় ফেলতে পারেনি কেউ। জয়ের শেষ হাসি এসেছে রোহিতের দল। ব্যাটিংয়ের শুরুতে নিউজিল্যান্ডের পারফরম্যান্স যথেষ্ট ভালো ছিল। দুই ওপেনার রাচিন রবীন্দ্র ও উইল ইয়ং দ্রুত রান করছিলেন। পাশাপাশি দুই পেসার মহম্মদ শামি ও হার্দিক পাণ্ড্যকে নিশানা করেন তাঁরা। দেখে যেন মনে হচ্ছিল নিউজিল্যান্ডের এই দুই ওপেনার ভালো রান করার উদ্দেশ্য নিয়ে মাঠে নেমেছেন। তাঁদের আটকাতে পাওয়ার প্লে-র মধ্যেই দুই স্পিনারকে বল দিতে হয় রোহিতকে। ভারতের এই জয়ের পেছনে বরুণ চক্রবর্তীর অবদান ভুললে চলবে না।
বল করতে এসে নিজের দক্ষতার দারুন প্রমাণ দিয়েছেন তিনি। রাচিন বড় শট মারতে গিয়ে ক্যাচ তোলেন। বাউন্ডারিতে সেই সুযোগ ফস্কান শ্রেয়স আয়ার। এতকিছুর পরেও দমে যাননি বরুণ চক্রবর্তী। ১৫ রানের মাথায় ইয়ংকে আউট করে ভারতীয় এই স্পিনার নিউজিল্যান্ডকে ধাক্কা দিয়েছেন ভালো রকম। পরে যখন গ্লেন ফিলিপ্স হাত খোলার চেষ্টা করছেন তখন ৩৪ রানের মাথায় তাঁকে বোল্ড করেন বরুণ। ১০ ওভার বল করে ৪৫ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন তিনি। গোটা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জুড়েই বেশ বিবর্ণ ছিলেন কুলদীপ যাদব। রোহিত শর্মা ভারতের চারজন স্পিনারের মধ্যে আগের বেশ কয়েকটি ম্যাচে সবার শেষে বল দিয়েছেন কুলদীপ যাদবকে।
তবে ফাইনালে কুলদীপের হাতে আগেই বল তুলে দেন রোহিত শর্মা। নিজের প্রথম বলেই ৩৭ রানের মাথায় রাচিনকে বোল্ড করেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান কেন উইলিয়ামসনকে ১১ রানের মাথায় ফেরান তিনি। জোড়া ধাক্কা নিউজিল্যান্ডকে অনেকটা পিছিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। তাদের যে রানের পাহাড় করার উদ্দেশ্য ছিল তা ক্রমশই অসফলতার দিকে গেল। ১০ ওভারে ৪০ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন কুলদীপ। নিউজিল্যান্ডের একের পর এক উইকেট পড়তে থাকায় সমস্যা বাড়তে থাকে। সেই কাজটা করেন ড্যারিল মিচেল। শুরুটা ধীর গতিতে করলেও তিনি অনেকক্ষণ টিকে ছিলেন ম্যাচে।
আরও পড়ুন: একই আইপিএল দলে একাধিক নেতা, সুবিধা নাকি অসুবিধা? উত্তর দিলেন সূর্যকুমার
টম লাথাম, গ্লেন ফিলিপ্স ও মাইকেল ব্রেসওয়েলের সঙ্গে জুটি বাঁধেন। এগিয়ে নিয়ে যান তিনি, অবশেষে ৯১ বলে নিজের অর্ধশতরান করেন মিচেল। মহম্মদ সামির বলে শেষ পর্যন্ত ৬৩ রান করে আউট হন তিনি। মিচেল দলকে একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নিয়ে যায়। নিউজিল্যান্ডের রানের গতি দেখে এক সময় মনে হচ্ছিল ২২০ তুলতেও তাদের খুব কষ্ট হবে। সেই কাজটা করে দেখালেন ব্রেসওয়েল। কঠিন সময়ে তিনি বড় শট দিয়ে দলকে একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নিয়ে গেছেন। ব্রেসওয়েল নিশানা করলেন ভারতের দুই পেসারকে। শেষ দিকে ঝোড়ো ইনিংস খেললেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ৪০ বলে ৫৩ রান করে অপরাজিত থাকলেন তিনি। তাঁর ব্যাটেই ৭ উইকেট হারিয়ে ২৫১ রান করল নিউজিল্যান্ড।
অন্যদিকে আবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির রবিবার খেলার ময়দানে ভারতের স্পিনারেরা ভাল বল করলেও পেসারেরা ব্যর্থ। নিউজিল্যান্ডের ব্যাটারেরা শেষ পর্যন্ত টার্গেট বানিয়েছিল শামি ও হার্দিককে। শামি ন’ওভার বল করে ৭৪ রান দিলেন এবং নিলেন মাত্র ১ উইকেট। হার্দিক তিন ওভারে দিলেন ৩০ রান, কিন্তু কোনও উইকেট পাননি। দুই পেসার মিলিয়ে ১২ ওভারে ১০৪ রান দিয়েছেন। সেখানে স্পিনারেরা ৩৮ ওভারে দিয়েছেন ১৪৪ রান। ফাইনালের দিন যদি পেসাররা আরেকটু ভালো পারফরমেন্স দিত তাহলে নিউজিল্যান্ডের রান আরো কম হতো।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালের ম্যাচে ভারতের ফিল্ডিং খুব একটা সন্তোষজনক ছিল না। চারটি ক্যাচ ধরতে ব্যর্থ হয়েছে প্লেয়াররা। মহম্মদ শামি, রোহিত শর্মা, শ্রেয়স আয়ার, শুভমন গিল ক্যাচ ফিরলেন। এর ফলে দুর্দান্ত সুযোগ পেয়েছিল নিউজিল্যান্ড। শুধুমাত্র ক্যাচ ফসকানো একমাত্র কারণ নয়, বাউন্ডারিতে খারাপ ফিল্ডিং করলেন কুলদীপ, শুভমন। তাই এক রানের বদলে অনেক জায়গায় দুই রান দিতে হয়েছে। নিউজিল্যান্ডকে কম রানে আটকানোর জন্য ভারতের ফিল্ডিং আরো ভালো হওয়া উচিত ছিল। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালের মতো এরকম গুরুত্বপূর্ণ একটা ম্যাচে ক্যাচ মিস করা সত্যিই অপরাধ। যদিও তার খেসারত দিতে হয়নি ভারতকে।