দীর্ঘ ১৫ বছরের চুক্তি এবছরই সমাপ্তি ঘটবে। ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে এফএসডিএলের চুক্তি শেষ হবে ডিসেম্বর মাসেই। নতুনভাবে চুক্তি করার জন্য প্রথমে প্রস্তাব দেওয়া হয় এফএসডিএলকেই। এআইএফএফ ভবিষ্যতের পথকে আরো সুগম করার জন্য গত শুক্রবার মুম্বইয়ে এক মিটিংয়ে বসেছিলেন। এফএসডিএল এবং ফুটবল ফেডারেশনের কর্তাদের এই মিটিং কতটা সফল হয়েছে তা এখন প্রশ্নের মুখে। মিটিংয়ে ঢোকার সময় যে হাসিমুখ ছিল মিটিং থেকে বেরোনোর পরে সেই হাসিমুখ আর ছিল না ফেডারেশন কর্তাদের। এফএসডিএলর প্রস্তাবে রীতিমত আতঙ্কিত ফেডারেশন কর্তারা। ভারতীয় ফুটবল অর্থ সাহায্য না পেলে কিভাবে চলবে? কোথা থেকে আসবে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ?
চুক্তি অনুযায়ী বার্ষিক ৫০ কোটি টাকা করে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে দিয়ে আসছিল এফএসডিএল। গত ১৫ বছর ধরে এই প্রক্রিয়া চললেও আর হয়তো তা কার্যকর হবে না। আইএসএল হচ্ছে ১১ বছর এবং তার আগে প্রথম চার বছর আইএসএল না করলেও শুধু শুধুই বার্ষিক ৫০ কোটি টাকা করে দিয়েছে তারা। গত ১৫ বছরের হিসাব করলে দেখা গেছে জাতীয় দল, আইএসএল-সহ দেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মার্কেটিং রাইটস রাখার পর তাদের সঙ্গে আইএসএলের ক্লাবগুলি এবং ব্রডকাস্ট পার্টনারের মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০০০ কোটি টাকার মতো। এছাড়াও রয়েছে এফএসডিএলের অপারেশনাল ক্ষতির পরিমাণ যা প্রায় ২৮০০ কোটি টাকা। বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির পরেও বিগত ১১ বছর ধরে টানা আর্থিক ক্ষতি বহন করে গিয়েছে এফএসডিএল এবং আইএসএলের ক্লাবরা। তাই নতুন করে এই আর্থিক ক্ষতি আর নিতে চাইছে না এফএসডিএল।
এফএসডিএল এর সঙ্গে ফেডারেশন কর্তাদের যে বৈঠক হয়েছে তাতে তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে যে, এফএসডিএল এখন থেকে শুধুমাত্র ভারতীয় ফুটবলের প্রতিযোগিতার মধ্যে আইএসএল আয়োজন করবে। অন্যদিকে তারা ফেডারেশন এর উপর ছেড়ে দিচ্ছে আইলিগ, সুপার কাপ, সন্তোষ ট্রফি-সহ একাধিক জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতার রাইটস। তারা মনে করছে যে, ভারতীয় ফুটবল কর্তারা এই প্রতিযোগিতাগুলি চালিয়ে ফেডারেশনের জন্য অর্থ উপার্জন করতে পারবে। এমনকি এফএসডিএল কোনরকম লভ্যাংশ সেখান থেকে চায়না। ভারতীয় ফুটবলের একটি বিশেষ অংশ আই লিগ, সন্তোষ ট্রফি নিয়ে ভারতীয় ফুটবল সমর্থকদের বিশাল আগ্রহ রয়েছে এমনটাই বারবার বলতে থাকে, ফেডারেশন কর্তাদের এখন প্রমাণ করতে হবে যে এই প্রতিযোগিতাগুলি থেকে এখনও স্পনসরশিপ থেকে বিশাল অর্থ পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: আইপিএলের শুরুতেই ধাক্কা, প্রথমার্ধে নেই মায়াঙ্ক যাদব!
এফএসডিএল মিটিংয়ে আরো জানিয়েছে যে, শুধুমাত্র আইএসএল নয় তারা নিজেদের কাছে জাতীয় দলের রাইটস রেখে দিতেও আগ্রহী। ফেডারেশন কর্তারা যদিও আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলেন অবস্থায় কোন দিকে গড়াতে পারে। মুম্বইয়ের মিটিংয়ে ফেডারেশন কর্তাদের অবাক করে তারা নতুন একটি ফরম্যাটের প্রস্তাব দেন। এখন থেকে ফেডারেশনকে প্রতিমাসে অর্থ সাহায্য করা হবে না। তার পরিবর্তে ইপিএল, লা লিগার মতো ফরম্যাটে চালানো হবে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ। সব পক্ষের কাছেই শেয়ার থাকবে। ফেডারেশন, ক্লাব, সম্প্রচারকারী সংস্থার পাশাপাশি লিগ প্রোমোটারের শেয়ার থাকবে আইএসএল পরিচালনায়। নতুন কোম্পানিতে আয়ের ১৪ শতাংশ লভ্যাংশ পাবে ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন। যদি কোনো কারণে লাভ না হয় তাহলে কিছুই পাবে না ফেডারেশন।
ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশন যখন এই ধরনের প্রস্তাব পেয়েছে এফএসডিএলের কাজ থেকে তখনই তাদের মাথায় হাত। ভারতীয় ফুটবল রীতিমত অচল হয়ে পড়বে যদি এফএসডিএল এর কাছ থেকে কোনরকম আর্থিক সাহায্য না পাওয়া যায়। এফএসডিএলকে বাদ দিয়ে যদি অন্য কোন সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে সেরকম বিকল্প ব্যবস্থাও নেই। কারণ এফএসডিএলকে ছেড়ে দিলে এককভাবে আইএসএল চালানোও সম্ভব হবে না ফেডারেশনের পক্ষে। মিটিংয়ে যখন ভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনকে ১৪ শতাংশ লভ্যাংশ শেয়ারের প্রস্তাব দেওয়া হয় তখনও তারা চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। এর ফলে ভারতীয় ফুটবল চালাতে খুবই সমস্যা হয়ে পড়বে।
এফএসডিএল কর্তারা জানিয়েছে, বাকি সব ফুটবলের রাইটস তারা ছেড়ে দিচ্ছে। সেগুলি স্পনসরারদের কাছে বিক্রি করে আর্থিক ভাবে লাভ দেখতে পারে ফেডারেশন। এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পিছনে আসল কারণ হলো, তারা ৫০ কোটি টাকা প্রতিবছর দিলেও ফেডারেশনের নানা খরচে তারা খুশি নয়। বিগত কয়েক বছরে তারা দেখেছে যে, ফেডারেশনের বিভিন্ন আধিকারীকদের বেতন বাবদ বিশাল আর্থিক খরচ হচ্ছে, যা এফএসডিএল কোনভাবেই ভালো চোখে দেখেনি। ফেডারেশনের বিভিন্ন কাজকর্মেও খুশি হতে পারছে না তারা। সন্তোষ ট্রফি সৌদিতে করার মতো ফেডারেশনের একাধিক বাজে খরচ নজরে এসেছে এফএসডিএলের। এফএসডিএলের প্রস্তাব নিয়ে নিজেদের মধ্যে মিটিং করবেন ফেডারেশন কর্তারা। নিজেদের প্রস্তাবের কথা পরে জানাবে ফুটবল ফেডারেশন। এখন দেখার সেই প্রস্তাব পাওয়ার পর এফএসডিএল কী সিদ্ধান্ত নেয়।