স্বাস্থ্যের পর এবার শিক্ষায় নজর, বেসরকারি স্কুলের ফি নিয়ন্ত্রণে আসতে চলেছে আইন

স্বাস্থ্যের পর এবার শিক্ষার ক্ষেত্রে বড় পদক্ষেপ নিতে চলেছে রাজ্য সরকার। বেসরকারি হাসপাতালের অতিরিক্ত চিকিৎসা খরচ নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক বছর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার স্বাস্থ্য কমিশন গঠন করেছিল, যার ফলে অসংখ্য মানুষ উপকৃত হয়েছেন। এবার বেসরকারি স্কুলগুলির লাগামছাড়া ফি বৃদ্ধিতে রাশ টানতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার।

বর্তমানে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অভিভাবকদের কাছ থেকে অভিযোগ আসছে, যেখানে বেসরকারি স্কুলগুলো বিভিন্ন অজুহাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ দাবি করছে। কোথাও ভর্তির সময় লক্ষাধিক টাকা চাওয়া হচ্ছে, কোথাও আবার আচমকাই বিজ্ঞপ্তি জারি করে মাসিক ফি দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, পরিকাঠামো উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বা অন্যান্য কার্যকলাপের নামে অভিভাবকদের ওপর বাড়তি অর্থের বোঝা চাপানো হচ্ছে। ফলে সন্তানের পড়াশোনার খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো।

শিক্ষা দপ্তরের কাছে এই বিষয়ে বহু লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং অভিভাবকদের স্বস্তি দিতে রাজ্য সরকার নতুন একটি আইন প্রণয়ন করতে চলেছে। এরপর সেই আইনের আওতায় একটি কমিশন গঠন করা হবে, যা বেসরকারি স্কুলগুলির ফি সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ন্ত্রণ করবে এবং যে কোনো ধরনের অতিরিক্ত খরচের বিষয়ে নজরদারি চালাবে। মঙ্গলবার বিধানসভা অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে এই প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা হয়। বিজেপি বিধায়ক সত্যনারায়ণ মুখোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন, বেসরকারি স্কুলগুলি অভিভাবকদের থেকে প্রচুর পরিমাণে ডোনেশন নিচ্ছে। রাজ্য সরকার কি এর উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ আনবে?

আরও পড়ুন: নয়া নিয়ম চালু করল কলকাতা পুরসভা, ছোট জমির ক্ষেত্রে এলো নতুন সিদ্ধান্ত

এর উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন যে, বেসরকারি স্কুলগুলির লাগামছাড়া ফি বৃদ্ধি এবং অভিভাবকদের আর্থিক সামর্থ্য না দেখে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়টি নিয়ে সরকারের কাছেও অভিযোগ এসেছে। এই সমস্যার সমাধান করতে রাজ্য সরকার খুব শীঘ্রই একটি বিল আনতে চলেছে। সেই বিল পাশ হওয়ার পর কমিশন গঠন করা হবে, যা এই ধরনের বিষয়গুলির উপর নজরদারি চালাবে। তিনি আরও বলেন যে, এই বিষয়টি বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রীর বিবেচনাধীন রয়েছে। খুব শীঘ্রই বিধানসভায় এই বিল পেশ করা হবে এবং তা পাশ করানোর জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে এটি কার্যকর হতে ঠিক কতদিন সময় লাগবে, তা মূলত রাজ্যপালের স্বাক্ষরের উপর নির্ভর করছে।

শিক্ষাবিদ ও অভিভাবক মহল এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের মতে, অনেক বেসরকারি স্কুল ইচ্ছামতো ফি বাড়িয়ে দিচ্ছে এবং অভিভাবকদের অন্য কোনও বিকল্প না থাকায় বাধ্য হয়েই সেই টাকা দিতে হচ্ছে। সরকারের এই নতুন আইনের ফলে অবাধ ফি বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত খরচের বোঝা কিছুটা হলেও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস অনুযায়ী, নতুন কমিশন কার্যকর হলে স্কুলগুলির ফি নির্ধারণের ক্ষেত্রে কিছু নীতিমালা তৈরি করা হবে এবং অভিভাবকদের অনুমোদন ছাড়া কোনো অতিরিক্ত ফি চাপানো যাবে না। এছাড়াও, কোনও স্কুল যদি বেআইনিভাবে অভিভাবকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন দেখার বিষয়, এই বিল কবে পাস হয় এবং নতুন কমিশন কার্যকর হওয়ার পর অভিভাবকরা বাস্তবিক অর্থে কতটা স্বস্তি পান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *