Chief Justice Chandrachud: স্বনামধন্য বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের জীবনেও রয়েছে অনেক লড়াইয়ের গল্প

Chief Justice Chandrachud: সমাজের কাছে স্বনামধন্য বিচারপতি, চন্দ্রচূড়ের জীবনেও রয়েছে অনেক লড়াইয়ের গল্প। ভারতের স্বনামধন্য প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। সম্প্রতি তিনি অবসর গ্রহণ করেছেন। কর্মজীবনে দাপুটে বিচারক হিসেবেই পরিচিত তিনি। ক্ষমতা, খ্যাতি, জশ সবকিছু নিয়ে সুখে স্বাচ্ছন্দেই জীবন কাটাতেন তিনি। কিন্তু বাইরে থেকে দেখে কারো ভিতরটা যাচাই করা মুশকিল। বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের ক্ষেত্রেও ঘটনাটা অনেকটা তেমনই। বাইরে থেকে দেখে তাকে অনেক সুখী, নিশ্চিন্ত মনে হলেও তার জীবনের উপর দিয়েও বয়ে গেছে অনেক ঝড়। হয়তো অনেকেই জানেন না ডিওয়াই চন্দ্রচূড় দুটি কন্যা সন্তানকে দত্তক নিয়েছিলেন। তারা দুজনেই বিশেষভাবে সক্ষম। নিজের পায়ে উঠে দাঁড়াতে পারে না তারা। তাদের নিয়েই অসম লড়াইয়ের মধ্যে দিন কাটিয়েছেন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় এবং তার স্ত্রী।

সম্প্রতি নিজের দুই মেয়ের জীবন যাত্রা সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় (Chief Justice Chandrachud)। মেয়েদের কথা বলতে গিয়ে তার বুকটা কেঁপে উঠেছে যেন। তার দুই মেয়ে এক বিরল রোগে আক্রান্ত। যার নাম নিমোলিয়ান মায়োপ্যাথি। এটি মূলত একটি জেনেটিক রোগ। ২০১৪ সালে উত্তরাখণ্ডে জন্মগ্রহণ করেছে এই দুই মেয়ে। জন্মের সময়েই এই রোগের লক্ষণ ধরা পড়েছিল তাদের শরীরে। কিন্তু সেই সময় এই রোগের চিকিৎসা করার মতন বা পরীক্ষা করার মতন ব্যবস্থা ছিল না ভারতে। দুই মেয়ের মধ্যে প্রথমে বড়জনের উপরে পরীক্ষা করা হয়, তারপর ছোট জনের উপরে। নিজে একটি বিরল রোগে আক্রান্ত হওয়া সত্বেও, এত লড়াইয়ের মাঝেও দিদি হিসেবে কর্তব্য করতে ভোলেননি চন্দ্রচূড়ের বড় মেয়ে। সে বলেছিল এই পরীক্ষাটায় খুব ব্যথা। বোনের উপর যেন এরকম কোন পরীক্ষা না করা হয়। অ্যানাস্থিসিয়া ছাড়াই শরীর থেকে টিস্যু কেটে বের করে পরীক্ষা করা হয় যা অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক।

দুই মেয়ের পড়াশুনা নিয়েও একাধিক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়কে (Chief Justice Chandrachud)। ২০১৪ সালে যখন তার মেয়েরা জন্মগ্রহণ করেছিলেন তখন উত্তরাখান্ডে বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের জন্য কোন স্কুলই ছিল না। তাই তারা চলে আসেন এলাহাবাদে। সেখানে এসে একটি মাত্র স্কুলই পাওয়া যায়। এদিকে বাড়িতে দুই মেয়ে সবসময় একটি স্কুল ব্যাগ, টিফিন বক্স এবং জলের বোতল সঙ্গে রাখতে শুরু করে। সব সময় এইটাই তাদের খেলার প্রিয় বস্তু হয়ে ওঠে। তিনি বুঝতে পারেন তার মেয়েরা স্কুলে যেতে চাইছে। এরপর তিনি দিল্লি চলে আসেন। সেখানে এসেও বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের জন্য একটি মাত্র স্কুলেরই খোঁজ পান তিনি। তাও আবার শুধুমাত্র আটিস্টিক বাচ্চাদের জন্য। সেই স্কুল থেকেই তাকে জানানো হয় তার মেয়েরা যেহেতু জেনেটিক রোগে আক্রান্ত তাই তারা সাধারণ স্কুলেই পড়াশোনা করতে পারবে।

এর পরই তিনি তার মেয়েদের জন্য উপযুক্ত স্কুলের খোঁজ করতে শুরু করেন। বেশিরভাগ স্কুল থেকেই প্রশ্ন এসেছে তার মেয়েরা নির্দিষ্ট স্কুলে মানিয়ে নিতে পারবে কিনা? অনেক খোঁজার পর এমন একটি স্কুল পাওয়া যায় যেখানকার কর্তৃপক্ষ জানায় যে তারা পড়াশোনাও শিখবে এবং খেয়াল রাখার জন্য বন্ধু হিসেবে একজনকে রাখা হবে। এরপর শুরু হয় নতুন জীবন। যদিও সব থেকে বেশি লড়াইটা করতে হয়েছিল দুই মেয়েকেই। কিন্তু এই লড়াইয়ে সমানভাবে দুই মেয়ের পাশে ছিলেন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় (Chief Justice Chandrachud) এবং তার স্ত্রী। স্কুলের কোন স্বাভাবিক অ্যাক্টিভিটিতে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হতো না তাদের। বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের জন্য বিদ্যালয়ে কিছু পরিকাঠামো রাখা প্রয়োজন। কিন্তু সেই সময় এই সমস্ত সুবিধা বিদ্যালয় পাওয়া যেত না। তার দুই মেয়ে বিজ্ঞান পড়তে ভালোবাসতো কিন্তু কোনদিন বিজ্ঞান ল্যাব অব্দি পৌঁছতে পারেনি। লিফট অথবা র‍্যাম্প না থাকার কারণে ক্লাস রুম থেকে বেরোতেই পারত না তারা। বাকি বন্ধুরা যখন খেলতে যেত তখনও তাদেরকে ক্লাসরুমে বসে থাকতে হতো। এমনকি নাটক, আবৃত্তি বা অন্য কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও তাদের অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হত না। যদি দর্শক তাদের কথা ধৈর্য ধরে শুনতে না চান!

আরো পড়ুন: আবারো বাঁধা পেলেন ইলন মাস্ক, স্টারলিংকের উপর শর্ত চাপালো কেন্দ্র

তাই তাদেরকে এই সমস্ত কাজ থেকে দূরে রাখা হতো। এত প্রতিকূলতার মাঝেও তাদের অদম্য ইচ্ছে শক্তির কাছে হার মেনেছে তাদের অক্ষমতা। একজন বিশেষভাবে সক্ষম শিশুও পারে অন্যদের আশ্রয়দাতা হয়ে উঠতে। তার প্রমান পাওয়া যায় এই দুই মেয়ের কর্মকান্ডে। প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় (Chief Justice Chandrachud) জানিয়েছেন লকডাউন চলাকালীন তার ছোট মেয়ে মাহির ক্লাস চলছিল স্কুলে। সেই সময় কাঠ কাটার শব্দ পায় মাহি। শিক্ষিকার অনুমতি নিয়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে আসে সে। বাইরে বেরিয়ে দেখতে পায় কাঠুরেরা এসে গাছ কাটছে। সে তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ করে। কাঠুরেদের উদ্দেশ্যে বলে ভুলেও গাছ কাটবেন না। এই গাছ অনেকের বাড়ি। পাখিরা বাস করে এখানে। গাছ কেটে ফেললে ওরা কোথায় থাকবে?

প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় (Chief Justice Chandrachud) তার মেয়ের জীবনে ঘটা এই কাহিনী বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন একজন বিশেষভাবে সক্ষম শিশু চাইলেই সাধারণের মতো আচরণ করতে পারে। ওরাও পারে অন্যের জীবনে পরিবর্তন আনতে। ওদের বোঝানোর ধরন হয়তো আলাদা। কিন্তু ওরাও পারে ওদের মতন করে বোঝাতে। স্বনামধন্য বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের কর্মজীবন যতটা গৌরবময়, ব্যক্তিগত জীবন ততটাই লড়াইয়ের। তার ব্যক্তিগত জীবনের এই কাহিনী বেশিরভাগ মানুষের কাছেই অজানা থেকে গেছে। গত ১০ই নভেম্বর অবসর গ্রহণ করেছেন তিনি। এরপর বাকি জীবনটা হয়তো দুই মেয়ের সাথে কাটাতেই স্বাচ্ছন্দ বোধ করবেন তিনি। তার অবসর জীবনের সবথেকে বড় উপহার হতে পারে তার দুই মেয়ের সাথে সব থেকে বেশি সময় কাটানোর সুযোগ পাওয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *