ভাগ্যে থাকলে কি না হয়। ভাগ্যের খেলায় কেউ রাতারাতি রাজপ্রাসাদ থেকে কুঁড়েঘরেও নামতে পারে। আবার ভাগ্যের দয়ায় কুঁড়েঘর থেকে রাতারাতি রাজপ্রাসাদেও ঠাঁই মেলে মানুষের। ঠিক এরকমই সৌভাগ্যের দেখা মিলল নদিয়ার তেহট্ট থানার নাজিরপুর বাগাডোবা গ্রামের অসীম বাবুর। ৪২ বছরের অসীম বাবু পেশায় একজন লটারি বিক্রেতা ছিলেন। রাস্তার পাশে তার লটারির (Lottery) পসরা সাজিয়ে অন্য মানুষকে বড়লোক করতেন। কিন্তু কখনো ভাবতে পারেননি তিনি নিজেও এক ধাক্কায় বড়লোক হয়ে যেতে পারেন।
পেশায় যেহেতু লটারি (Lottery) বিক্রেতা ছিলেন তাই খুবই কষ্টের সংসার চালাতেন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে। কোনো রকমে দিন যাপন করছিলেন। কিন্তু ২৮ শে অক্টোবর তার জীবন একেবারে পাল্টে দিলো। ২৮ শে অক্টোবর তার লটারির টিকিট বেচাকেনা মোটেই ভালো হয়নি। যার ফলে বেশ কিছু টিকিট তার কাছে ছিল। যেহেতু কোনো ক্রেতা নেই, সেই টিকিটের পুরস্কারের ভাগীদার হন অসীম বাবু। কিন্তু সেই টিকিটে যে লুকিয়ে ছিল এত বড় অংকের পুরস্কার তা তিনি স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি।
যে বেশ কিছু লটারির (Lottery) টিকিট বেঁচে গিয়েছিল সেই টিকিটগুলোর মধ্যেই লুকিয়ে ছিল কোটি টাকার পুরস্কার। ২৮শে অক্টোবর রাতেই অসীম বাবু জানতে পারেন যে তিনি রাত পেরোলে কোটি টাকার মালিক হতে চলেছেন। সেই খবরে আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন। এতদিন যে কষ্ট করে সংসার চালাচ্ছিলেন, যে কষ্টে দিন কাটাচ্ছিলেন সেই কষ্টের অবসান রাতারাতি হয়ে যেতে পারে তা কল্পনার অতীত। তাই টাকাটি পাওয়ার সাথে সাথেই তিনি তৎক্ষণাৎ আয়োজন করে ফেলেন বিরাট এক কালীপুজোর।
আরো পড়ুন: বাড়বে লেন, এবার আরও চওড়া হবে মেট্রোপলিটনের ইএম বাইপাস
চার-চারটি প্রতিমা দিয়ে ১০৮ জন ঢাকে দিয়ে গ্রামের শোভাযাত্রা করে রীতিমতো এলাহী আয়োজনে কালীপুজো করেন। নিমন্ত্রণ অতিথির সংখ্যা ছিল প্রায় ২০০০ এর কাছাকাছি। সবাইকেই পেট পুরে খিচুড়ি, আলুর দম, মিষ্টি, চাটনি, পাপড় সমস্ত কিছু খাওয়ান। তবে এই ১০৮ ঢাকি দিয়ে শোভাযাত্রা নজর কাড়ে সকলের। নদীয়া জেলায় এতজন ঢাকি না পাওয়ায় পার্শ্ববর্তী মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে ভাড়া করে আনতে হয় ঢাকিদের। প্রত্যেকটি ঢাকা থেকেই উপযুক্ত পারিশ্রমিক দেওয়া হয়।
যে মানুষ এক পোশাকে দিনের পর দিন চালাতেন সেই মানুষ কালীপুজোর দিন নতুন ধুতি-গেঞ্জি পড়ে শোভাযাত্রায় উপস্থিত হন। এমনকি তার পরিবারের সবাইকেই নতুন জামা কাপড়ে সজ্জিত করে তোলেন। এত পরিমান টাকার কি করবেন জিজ্ঞাসা করার উত্তর দেন যে বেশ কিছু পরিমাণ টাকা তিনি ছেলে মেয়ের উচ্চ শিক্ষার জন্য রেখে দেবেন। কিছু টাকা দিয়ে দোকান ঘর পাকা করবেন। কিন্তু রাস্তার পাশে লটারির ঝাঁপটি বন্ধ করবেন না। তার কারণ সেই ছোট্ট ঝাঁপি আজ কোটি টাকার উৎস।