হাজার হাজার টাকা নয়, ঘরোয়া উপায়েই তৈরি করুন অ্যান্টি-এজিং উপাদান

বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের ত্বক ধীরে ধীরে তার স্থিতিস্থাপকতা হারায়, পাতলা এবং শুষ্ক হয়ে যায়। এর ফলে সূক্ষ্ম রেখা, বলিরেখা, বয়সের দাগ এবং বার্ধক্যের অন্যান্য লক্ষণ দেখা দেয়। যদিও অনেক ঘরোয়া প্রতিকার রয়েছে যা বার্ধক্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। বর্তমানে কাজের চাপ, মানসিক চাপ বৃদ্ধির ফলে মানুষ খুব দ্রুত বুড়িয়ে যাচ্ছে। তাই জেনে নিন অ্যান্টি-এজিং উপাদান বানানোর বেশ কিছু উপায়।

অ্যান্টি-এজিং উপাদান তৈরির উপায়:

১. নারকেল তেল: নারকেল তেল এমন একটি উপকারী তেল যা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিনে ভরপুর। এটি একটি চমৎকার ময়েশ্চারাইজার এবং বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে। ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনার মুখ এবং ঘাড়ে অল্প পরিমাণে নারকেল তেল লাগিয়ে শুয়ে পড়লে উপকার পাওয়া যাবে।

২. অ্যালোভেরা: অ্যালোভেরা শতাব্দী ধরে ত্বকের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর এবং এর প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা বলিরেখা কমাতে এটি একটি চমৎকার প্রতিকার। আপনার মুখ এবং ঘাড়ে তাজা অ্যালোভেরা জেল লাগান এবং ১৫-২০ মিনিট ধরে রেখে গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

৩. গ্রিন টি: গ্রিন টি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর যা ত্বককে ফ্রি র‍্যাডিক্যালের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এতে পলিফেনলও রয়েছে যা ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করতে এবং বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে। একটি গ্রিন টি ব্যাগ গরম জলে কয়েক মিনিট ভিজিয়ে রাখুন, ঠান্ডা হতে দিন এবং তারপর একটি তুলোর বল ব্যবহার করে আপনার মুখ এবং ঘাড়ে চা লাগান।

৪. পেঁপে: পেঁপেতে অ্যান্টি-এজিং উপাদান হিসাবে প্যাপেইন নামক একটি এনজাইম থাকে, যা ত্বককে এক্সফোলিয়েট করতে এবং মৃত ত্বকের কোষ অপসারণ করতে সাহায্য করে, যার ফলে ত্বক আরও সতেজ এবং তরুণ দেখায়। এটি ভিটামিন এ, সি এবং ই সমৃদ্ধ, যা সূক্ষ্ম রেখা এবং বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে। কেবল একটি পাকা পেঁপে পিষে নিন এবং আপনার মুখ এবং ঘাড়ে লাগান, ১৫-২০ মিনিটের জন্য রেখে দিন এবং তারপর গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

৫. মধু: মধু একটি প্রাকৃতিক হিউমেক্ট্যান্ট, যার অর্থ এটি ত্বকে আর্দ্রতা আকর্ষণ করতে এবং ধরে রাখতে সাহায্য করে। এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যও রয়েছে, যা ব্রণ-প্রবণ ত্বকের জন্য এটি একটি চমৎকার প্রতিকার। আপনার মুখ এবং ঘাড়ে কাঁচা মধুর একটি পাতলা স্তর লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিটের জন্য রেখে দিন এবং তারপর গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

৬. অ্যাভোকাডো: অ্যাভোকাডো স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর যা ত্বককে পুষ্টি জোগায় এবং সুরক্ষিত করতে সাহায্য করে। এতে ভিটামিন ইও রয়েছে, যা সূক্ষ্ম রেখা এবং বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে। কেবল একটি পাকা অ্যাভোকাডো পিষে নিন এবং আপনার মুখ এবং ঘাড়ে লাগান, ১৫-২০ মিনিটের জন্য রেখে দিন এবং তারপর গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

৭. লেবুর রস: লেবুর রস একটি প্রাকৃতিক অ্যাস্ট্রিঞ্জেন্ট যা ত্বককে টানটান করতে এবং বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে। এতে অ্যান্টি-এজিং উপাদান হিসাবে ভিটামিন সি রয়েছে, যা ত্বককে উজ্জ্বল করতে এবং ত্বকের গঠন উন্নত করতে সাহায্য করে। কেবল একটি তুলোর বল ব্যবহার করে আপনার মুখ এবং ঘাড়ে তাজা লেবুর রস লাগান এবং ১০-১৫ মিনিটের জন্য রেখে দিন এবং তারপর গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

৮. শসা: শসা একটি প্রাকৃতিক অ্যাস্ট্রিঞ্জেন্ট যা ত্বককে টানটান করতে এবং সূক্ষ্ম রেখা এবং বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে। এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ, যা ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা এবং গঠন উন্নত করতে সাহায্য করে। কেবল একটি শসা কেটে নিন এবং কুসুম গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলার আগে আপনার মুখ এবং ঘাড়ে ১০-১৫ মিনিটের জন্য স্লাইসগুলি রাখুন।

৯. হলুদ: হলুদ হল একটি মশলা ও ত্বকের জন্য উন্নত অ্যান্টি-এজিং উপাদান। হলুদ অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর এবং এর প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটি বহু শতাব্দী ধরে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় বিভিন্ন ত্বকের রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কেবল ১ চা চামচ হলুদ গুঁড়ো ১ টেবিল চামচ মধুর সাথে মিশিয়ে মিশ্রণটি আপনার মুখ এবং ঘাড়ে লাগান।

আরও পড়ুন: নতুন আতঙ্কের নাম গুইলেন ব্যারে সিনড্রোম, জিবিএসের লক্ষণ কিভাবে আটকাবেন

৩টি যাদুকরী অ্যান্টি-এজিং উপাদান সমৃদ্ধ ফেস মাস্ক:

এখানে কিছু কার্যকর অ্যান্টি-এজিং উপাদান হিসেবে ফেস মাস্ক বানানোর পদ্ধতি দেওয়া হল যা আপনি সহজেই ঘরে তৈরি করতে পারেন। প্রতিটি মাস্ক বার্ধক্য রোধকারী ত্বকের চিকিৎসার জন্য আলাদাভাবে কাজ করে:

১. ডিমের সাদা অংশ ফেস মাস্ক: ডিমের সাদা অংশ খুব ভালো অ্যান্টি-এজিং উপাদান। এটি ত্বকের নানা সমস্যার জন্য একটি জনপ্রিয় ঘরোয়া প্রতিকার। এগুলি ত্বককে টানটান এবং টোন করতে সাহায্য করে, ছিদ্র সঙ্কুচিত করে সূক্ষ্ম রেখা এবং বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত তেল অপসারণ করে।

  • উপকরণ: ডিমের সাদা অংশ – ১, লেবুর রস – ১ চা চামচ, মধু – ১ চা চামচ
  • ব্যবহার পদ্ধতি: একটি ডিমের সাদা অংশ লেবুর রস এবং মধু দিয়ে ফেটিয়ে নিন যতক্ষণ না ফেনা বের হয়। এটি আপনার মুখে লাগান এবং ১৫-২০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

২. কলার ফেস মাস্ক: কলা ভিটামিন এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের ভাণ্ডার যা ত্বককে আর্দ্রতা প্রদান করে, ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করে এবং বলিরেখা কমাতে সাহায্য করে। কলার ফেস মাস্ক ত্বকের অ্যান্টি-এজিং উপাদান হিসাবে দারুন কাজ করে।

  • উপকরণ: কলা – ১টি পাকা, মধু – ১ টেবিল চামচ, লেবুর রস – ১ চা চামচ
  • ব্যবহার পদ্ধতি: কলা চটকে মধু এবং লেবুর রসের সাথে মিশিয়ে নিন।
  • আপনার মুখে লাগান এবং ১৫-২০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

৩. কফি ফেস মাস্ক: কফিতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ক্যাফিন থাকে যা রক্ত ​​সঞ্চালন উন্নত করতে এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস-সম্পর্কিত বার্ধক্য এবং মুখের ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে। এই মাস্কটি ত্বককে টানটান করতেও সাহায্য করে, আপনাকে আরও তরুণ এবং উজ্জ্বল চেহারা দেয়। ফলে ত্বকের অ্যান্টি-এজিং উপাদান হিসাবে এর জুড়ি নেই।

  • উপকরণ: কফি – ১ টেবিল চামচ, মধু – ১ টেবিল চামচ, দই – ১ টেবিল চামচ
  • ব্যবহারের পদ্ধতি: কফি গ্রাউন্ড, মধু এবং দই মিশিয়ে একটি চমৎকার অ্যান্টি-এজিং উপাদান তৈরি নিন। আপনার মুখে লাগান এবং ২-৩ মিনিটের জন্য আলতো করে ম্যাসাজ করুন। তারপর এটি ১৫-২০ মিনিটের জন্য রেখে দিন এবং হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *