বর্তমানে ছেলেমেয়েদের উচ্চশিক্ষার জন্য বহু প্রকল্প চালু করেছে সরকার তরফে। তেমনি সেই সুবিধা কাজে লাগিয়ে অনেকেই নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করছেন। তেমনি মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ঘরের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার প্রতি অনুপ্রেরণা জোগাতে উঠে এল আরো এক সাধারণ ঘরের মেয়ের স্বপ্ন পূরণের সাফল্যের গল্প। আবারো প্রমাণিত হলো উচ্চশিক্ষায় আর আর্থিক অনটন কোনো বাধা নয়, পরিশ্রম করলেই লক্ষ্য পূরণের পথ পরিষ্কার হয়ে যায়। যা প্রমাণ করলো বাংলার মেয়ে পরভিন সুলতানা। আইটিআই পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করল বঙ্গকন্যা। কিভাবে এই সফলতা অর্জন করলো পরভিন?
কথায় আছে, ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়। আর তেমনটাই করে দেখালো ক্যানিংয়ের মেয়ে পরভিন সুলতানা। আর পাঁচটা সাধারণ ঘরের সাধারণ মেয়ের মধ্যেই একজন হলেন পরভিন সুলতানা। যাদের সংসার চলে অতি কষ্টে। বাড়ি ক্যানিংয়ের তালদি শহরে। তালদির মাছের আড়তে শ্রমিক হিসেবে কাজ করে পরভিনের বাবা তাজিউর রহমান সর্দার। সংসার সামলান পরভিনের মা রিজিয়া বিবি। যা রোজগার হয় তাতেই ঠিকঠাক সংসার চলে না। পড়াশোনা তো দূরের কথা। তবে আর্থিক অভাবে পরভিন যে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে তা কিন্তু নয়। বরং নিজে পড়াশুনার খরচ তুলে পড়াশোনা করার চেষ্টা করেছেন। আর তাতেই দুর্দান্ত ফলাফল পেয়েছে আইটিআইয়ে।
জানা গেছে সর্বভারতীয় স্তরের পরীক্ষা আইটিআইতে দেশের মহিলাদের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে ক্যানিংয়ের পরভিন সুলতানা। ‘মেকানিক ডিজেল ট্রেড’ পরীক্ষায় ৬০০ নম্বরের মধ্যে ৫৯৯ নম্বর পেয়ে দুর্দান্ত রেজাল্ট করেছে পরভিনঌ তাও আবার প্রাইভেট টিউশন ছাড়াই। যা শুনে প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। পরভিনকে প্রশংসাপত্র প্রদান করা হয়েছে দিল্লি থেকে।
আরও পড়ুন: পদ্ম পুরস্কার পেলেন একাধিক বঙ্গ সন্তানেরা, তালিকায় রয়েছে বাংলার আরো নাম
তবে এই উজ্জ্বল সাফল্য পেয়ে খুশি নন পরভিন। এ বিষয়ে পরভিন বলেন, কলেজ শিক্ষকদের সহায়তা এবং অনলাইনের পড়াশোনার মাধ্যমে তার এই সফলতা। তবে তিনি আরো পড়াশোনা করতে চান। কিন্তু তার বাবার রোজগার খুব একটা মজবুত নয়। তাই পরভিনের উক্তি, তিনি যদি এই সময় একটি চাকরি পান তাহলে তা তার উচ্চশিক্ষার জন্য খুব সহায়তা করবে।
ভালো ফলাফল করে আর্থিক অভাবের কারণে পরভিনের মনঃকষ্ট হলেও তার পরিবার আইটিআইয়ে এই তাক লাগানো ফলাফলে বেশ খুশি। তবে পরভিনের মা-বাবা উভয়েরই একটাই বক্তব্য, মেয়ের এই উচ্চশিক্ষার সাফল্যে তারা খুশি হলেও এর পরবর্তী ধাপে মেয়েকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের সামর্থ্য নেই। তাই তাদের উক্তি, সরকার তরফে যদি তাদের মেয়ের জন্য কিছু করা হয় তাহলে তারা উপকৃত হবে। তবে এই বিষয়ে তালদি মৎস্য আড়তের সম্পাদক আশার হাত বাড়িয়েছেন। তিনি বলেছেন, পারভিন সকলের গর্ব। পরভিন এগিয়ে যাক, তারা পরভিনের পাশে আছে। ফলস্বরূপ আর্থিক অভাবে পিছিয়ে পড়লে চলবে না। লক্ষ্য পূরণের জন্য কঠোর পরিশ্রম করতেই হবে। তাহলেই হবে স্বপ্ন পূরণ।