ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রতিশ্রুতি ছিল অনেক। তারপর কেটে গিয়েছে এক দশক। প্রথম ক্ষমতায় আসার আগে দেশবাসীর মনে ভরসা জুগিয়েছিলেন মোদি, তারপর কেটে গেছে অনেক সময় আজ ২০২৫ সালে এসেও সেই সব স্বপ্ন পূরণ হয়নি এখনও। ইতিমধ্যেই ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি কোপ বসিয়েছে সাধারণ নিম্নবিত্ত মানুষের পকেটে। সম্প্রতি একাধিক সংস্থার দ্বারা প্রকাশিত তথ্য বলছে নরেন্দ্র মোদীর আমলে দারিদ্রতার সীমা ছাড়িয়েছে। অন্যদিকে দেশের ধনী ব্যক্তিরা আরও ধনী হয়ে উঠেছে।
ক্রমাগত পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে দৈনন্দিন জিনিস পত্রের দাম। যার জেরে দেশের গরীব মানুষদের অবস্থা যতই শোচনীয় হয়ে পড়ুক না কেনো দেশের ধনকুবের দের ঋণ ঠিকই মুকুব হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার দ্বারা প্রকাশিত একটি তথ্য থেকে জানা গিয়েছে মোদি সরকারের আমলে গত দশ বছরে রাজ্যের সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলো হারিয়েছে ১৪ লক্ষ কোটি টাকা। সম্প্রতি রাইট টু ইনফরমেশন বা ভারতীয় সংবিধানের তথ্য জানার অধিকার আইনে এই তথ্য সামনে এনেছে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া।
সেই তথ্য অনুযায়ী ২০১৪ সাল থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ১০ বছর সময়ের মধ্যে মোট ১৬ লক্ষ ৬১ হাজার ৩১০ কোটি টাকার অনাদায়ী ঋণ দেশের সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাংকের হিসেবে তালিকা থেকে উধাও হয়েছে। জানা যাচ্ছে এই বিশাল অর্থের পরিমাণের মাত্র ২ লক্ষ ৬৯ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। যা মোট অর্থের মাত্র ১৭ শতাংশ। আর বাকি প্রায় ১৪ লক্ষ কোটি টাকা অনাদায়ী হয়ে রয়ে গেছে। যা আদায় হওয়ার আশাও ক্ষীণ বলে জানাচ্ছে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া।
সম্প্রতি প্রকাশিত এই তথ্য অনুযায়ী বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর গত দশ বছরে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক গুলিতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ ঋণ রাইট অফ করে দেওয়া হয়েছে। এর পরিমাণ প্রায় ১২ লক্ষ ৪ হাজার ৬২১ কোটি টাকা। এদিকে বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির ক্ষেত্রেও ৪ লক্ষ ৪৬ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা এখনও অনাদায়ী, যা হিসেবের খাতায় নেই। এছাড়াও আরবান কোঅপারেটিভ ব্যাংক গুলির ক্ষেত্রেও অনাদায়ী অর্থের পরিমাণ ৬ হাজার ২০ কোটি টাকা।
আরও পড়ুন: পোস্ট অফিসে টাকা বিনিয়োগ করতে চান, এই স্কিম আপনাকে করে তুলবে লাখপতি
সম্প্রতি রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী মুকূব হওয়া ঋণ গুলোর বেশিরভাগই কর্পোরেট লোন। যার পরিমাণ এতটাই বেশি যে ওই অর্থ দিয়ে আফ্রিকার দেশগুলি পর্যন্ত উন্নয়নের আলো দেখতে পারতো। চলতি অর্থবছরে কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী প্রত্যক্ষ কর বাবদ ১৬ লক্ষ কোটি টাকা উপার্জন হয়েছে। এর উপর আলোড়ন ফেলে দেওয়া খবর হলো এর সম পরিমাণ অর্থ গত দোষ বছরে ব্যাংকগুলি হারিয়েছে। বিজেপি ক্ষমতায় এসে এহেন অবস্থা সকলকে দুশ্চিন্তায় ফেলছে।
কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক প্রতিশ্রুতি সত্বেও ঋণের অর্থের হিসেব খাতা থেকে মুছে ফেলছে ব্যাংকগুলো। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে যে সরকারের ঋণ আদায়ের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে যেনো বারবার ঋণ রাইট অফ করছে ব্যাংকগুলো? তথ্য বলছে একটি আলাদা লক্ষ্যে এই কাজ করা হচ্ছে। জানা যাচ্ছে ব্যাংকের ব্যালেন্স শিটে অণুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ কম দেখানোর জন্যই এই বিপুল অর্থ রাইট অফ করে দিচ্ছে বলে জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া।