Green Mango: গরমকালে কাঁচা কিংবা পাকা দুটো আমই খুব সুস্বাদু। বাঙালির রসনা তৃপ্তিতে গ্রীষ্মকালে কাঁচা আম পাতে থাকবে না এ তো হতেই পারে না। আম দিয়ে টক ডাল কিংবা আমপোড়া শরবত অথবা রোদমাখা গ্রীষ্মের দুপুরে ঝালনুন মাখানো কাঁচামিঠে আম— গরমকালে কাঁচা আমের গন্ধ এবং স্বাদ মানুষকে পাগল করে দেয়। কাঁচা আম ভালোবাসা না এমন মানুষ কোথায় খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে জানেন কি এই মনভোলানো স্বাদ এবং গন্ধের বাইরেও কিন্তু এর একটি বিশেষ গুণ রয়েছে।
কি বিশেষ গুণ লুকিয়ে রয়েছে কাঁচা আমে (Green Mango)?
বিশিষ্ট চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিদরা বলেছেন যে, লিভার ভালো রাখতে গেলে অবশ্যই খেতে হবে কাঁচা আম(Green Mango)। লিভার শুধুমাত্র শরীরের দূষণ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে তা নয়, পাশাপাশি হজম করতে সাহায্য করে এবং শরীরকে সুস্থ রাখে। যদি মানবশরীরে লিভারের কোনরকম রোগ বাসা বাঁধে তাহলে কিন্তু শরীর নিমেষেই দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে শরীরে নানারকমের রোগ দেখা দেয়। পুণের লিভার প্রতিস্থাপনের চিকিৎসক বিপিন বিভূতি বলছেন, বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে দেখা গিয়েছে যে, কাঁচা আম বাইল উৎপাদনে সাহায্য করে, যা লিভারের কাজের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
কাঁচা আম কিভাবে লিভারকে সুস্থ রাখবে?
- ১। শরীরকে দূষণমুক্ত করতে গেলে প্রথম কাজ হল শরীরে আগত ফ্যাটকে ভেঙে দেওয়া। এই কাজটি করে লিভার। এরপরে এর থেকে বিষাক্ত এবং দূষিত পদার্থ আলাদা করে। বাইল লিভারের এই প্রক্রিয়ার জন্য জরুরি। বাইল তৈরি করতে লিভারকে সাহায্য করে কাঁচা আম। বাইল ফ্যাট শোষণ করতে সাহায্য করে এমনটাই জানাচ্ছেন বিশিষ্ট চিকিৎসকেরা।
- ২। পাশাপাশি এই দূষণমুক্তির প্রক্রিয়াকে সচল রাখতে সাহায্য করে কাঁচা আমে(Green Mango) থাকা ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালশিয়াম এবং ফাইবার।
- ৩। লিভারকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায় কাঁচা আমের (Green Mango) শাঁসে থাকে লুপেয়োল নামক একটি উপাদান।
কাঁচা আম (Green Mango) আর কোন কোন উপকারে লাগে?
হজম করতে সহায়তা: কাঁচা আম (Green Mango)এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা হজম করতে অত্যন্ত কার্যকরী। পেটের স্বাস্থ্য এর ফলে ভালো থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম, অ্যাসিডিটির মতো সমস্যা দূর করতে কাঁচা আম খুবই উপকারী।
হার্টের স্বাস্থ্য: কোলেস্টেরল কমানোর পাশাপাশি রক্ত সঞ্চালনেও সহায়তা করে কাঁচা আম। এতে থাকে ভিটামিন বি এবং ফাইবার। হার্টের পক্ষেও কাঁচা আম ওষুধের মত কাজ করে।
রক্তাল্পতা দূর করা: এতে থাকে ভিটামিন সি এবং অন্য পুষ্টিগুণ যা কোলাজেন সংশ্লেষে সাহায্য করে। রক্তাল্পতা, রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা, হেমোফিলিয়ার মতো রক্তের অসুখ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে কাঁচা আম। কাঁচা আম রক্তবাহী নালীকে প্রসারিত করে রক্ত সঞ্চালন ভাল করে।এছাড়াও রক্তে নতুন কোষ তৈরি করতেও সাহায্য করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করা: যারা নিজেদের ওজন কমাতে চান তারা পাকা আম খাওয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন। কিন্তু কাঁচা আমের (Green Mango)ক্ষেত্রে ব্যাপারটি সম্পূর্ণ আলাদা। কাঁচা আমে ক্যালোরি খুবই কম থাকে এবং এদের শর্করাও থাকে কম পরিমাণে। পরিবর্তে কাঁচা আমে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। তাই ওজন কমানোর খাদ্যতালিকায় এই গ্রীষ্মে একবেলা কাঁচা আমের স্যালাড রাখা যেতেই পারে।
আরও পড়ুন: হাজার হাজার টাকা নয়, ঘরোয়া উপায়েই তৈরি করুন অ্যান্টি-এজিং উপাদান
দাঁত ও মাড়ির স্বাস্থ্য: বেশিরভাগ মানুষেরই আজকাল দাঁতের সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। কাঁচা আমের সেবনে দাঁতের বহু সমস্যার সমাধান হতে পারে। দাঁতের ক্ষয় কমানো এবং দাঁতের গোড়া মজবুত করা কাঁচা আমের অন্যতম কাজ। এছাড়াও মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে কাঁচা আম একেবারে অব্যর্থ ওষুধ। এছাড়াও আমরা সকলেই জানি যে, ভিটামিন সি-এর অভাবে মাড়িতে স্কার্ভি রোগ হয়, কাঁচা আমের দ্বারা তাও দূর করা সম্ভব। কারণ, কাঁচা আমে রয়েছে ভরপুর ভিটামিন সি। দেহের দৈনিক ভিটামিন সির চাহিদার ৬০ শতাংশ পূরণ করতে কাঁচা আম খাওয়া অত্যন্ত জরুরি।
ত্বক, চুল ও চোখ: ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্যের জন্য কাঁচা আম(Green Mango) অত্যন্ত উপকারী। কাঁচা আমে থাকা ভিটামিন সি, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন কে ত্বক এবং চুলকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও ভিটামিন এ দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখে।
কতটা খাবেন কাঁচা আম (Green Mango)?
তীব্র গরমের হাত থেকে বাঁচতে এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখার জন্য কাঁচা আম অত্যন্ত উপকারী। শরীরের জন্য উপকারী হলেও নির্দিষ্ট পরিমাণ কাঁচা আম সেবন করতে হয়। অতিরিক্ত কাঁচা আম খেলে পেটব্যথা, পেটখারাপ, গলায় অস্বস্তির মতো সমস্যা হতে পারে। পুষ্টিবিদরা আরো একটি ব্যাপারে সতর্ক করেছে সাধারণ মানুষকে কাঁচা আম খাওয়ার পরেই ঠান্ডা জল খেতে বারণ করা হয়েছে, তাতে গলায় অস্বস্তি বাড়তে পারে।