প্রাচীন মন্দিরের হদিশ পেয়ে মন্দির সংস্করণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেইমতো শুরু হয়েছিল মাটি খননের কাজ। আর সেই মাটি খুঁড়তে গিয়েই ভূগর্ভ থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা গেল শিবলিঙ্গ। যা দেখে শিহরিত বীরভূমবাসী। যত খনন গভীর হয় ততই স্পষ্ট হয় শিবলিঙ্গ। আর সেই দেখেই খননকার্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় গ্রামবাসীরা। কোথায় ঘটেছে এই ঘটনা কিভাবে বা এই প্রাচীন শিব মন্দিরের হদিশ পাওয়া গেল? কি ইতিহাস রয়েছে? এই নিয়েই জোর চর্চা বীরভূম জেলা তথা রাজ্যজুড়ে। বিষয়টি কি?
সূত্রের খবর, বীরভূমের নানুরের সাকুলিপুর গ্রামে সোমবার এই প্রাচীন শিব মন্দিরে অদ্ভুত ঘটনাটি ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে ওই প্রাচীন শিব মন্দিরের পৌরাণিক ঘটনা। জানা গিয়েছে বীরভূমের ওই গ্রামে বহু যুগ আগে তিলি সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল। সেই সম্প্রদায় ওই স্থানে মহাদেব পুজো করতেন। ধীরে ধীরে পুজোর প্রচলন বাড়তে থাকে। একসময় সেখানে ধুমধাম করে বাবা শিবের পুজো হত, মেলা বসতো। কালের সময়ে সেই স্থান ত্যাগ করে তিলি সম্প্রদায়। পরবর্তীতে সেই স্থান দখল করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। বর্তমানেও নীল ষষ্ঠী, শিবরাত্রি পুজো হয়। কিন্তু কালের সময়ে মন্দিরের যৌলুস, ঐশ্বর্য কমে যায়। প্রায় ভগ্নপ্রায় হয়ে যায়। আর সেই কারণেই গ্রামের মানুষ সিদ্ধান্ত নেন মন্দির সংস্করণ করার। সংস্করণ করতে গিয়েই ঘটে আজব ঘটনা।
বীরভূমের ওই স্থানের গ্রামবাসীদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুরু হয় মাটি খনন করার কাজ। প্রায় ৬ ফুট খোঁড়া হয়ে যায়। মাটি যত খোঁড়া হয় ততই বেরিয়ে আসে শিবলিঙ্গ। যা দেখে শিহরিত হয়ে ওঠে গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসীদের উক্তি, ওই শিব পাতালেশ্বর। অর্থাৎ এই মাটি যত খনন করা হবে ততই স্পষ্ট হবে শিবলিঙ্গ। তাই অনেকে মাটির নিচে কি আছে তা জানতে কৌতুহলী হলেও হিতে বিপরীত যাতে কিছু না ঘটে তার জন্য খনন কার্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় গ্রামবাসীরা। আর এই খবরই ছড়িয়ে পড়ে বীরভূম তথা গোটা রাজ্যজুড়ে।
আরও পড়ুন: প্রশ্নের মুখে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত, আরএ পেলেও কিভাবে রাখা হবে পরীক্ষার হলে?
গ্রামবাসীদের কথায়, এই শিব সাকুলেশ্বর-পাতালেশ্বর-অনাদিলিঙ্গ হিসেবে পরিচিত। কারণ এই গ্রামে এই শিব নাকি পাতাল থেকে আবির্ভূত হন। তাই এই শিবের কোনো শেষ নেই। যে কারণে প্রায় ৬ ফুট মাটি খননের পর এই দৃশ্য দেখে কাজ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় গ্রামবাসীরা। এ বিষয়ে গ্রামের এক স্থানীয়া মুন্সি গোলাম গাউস জানান, পারস্য থেকে তাদের পূর্বপুরুষরা বীরভূমের এই স্থানে বসবাস শুরু করেছিলেন। সেই সময়ে এই মন্দিরের চারিদিকে তারাই পাঁচিল দেন। হিন্দু-মুসলিম মিলেমিশে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই গ্রামে থাকেন। ফলে মন্দির সংস্করণ হবে বলে সকলেই খুব খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু এই আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটায় সকলেই চমকিত। এ বিষয়ে ইতিহাসবিদদের কি মত?
প্রসঙ্গত, অত্যন্ত পুরনো একটি গ্রাম বীরভূমের এই সাকুলিপুর। তার পূর্বে নাম ছিল কিসমত সাখলি পুর। এই গ্রামের মাটির সাথে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে ধর্মমঙ্গলের। বহু প্রাচীন যুগ থেকেই এই স্থানে শিবলিঙ্গের পূজা হয়ে আসছে। তবে সোমবার মাটি খনন করে যে শিবলিঙ্গ দেখা গিয়েছে সে বিষয়ে ইতিহাসবিদ তথা সিউড়ি বিদ্যাসাগর কলেজের অধ্যাপক মজুমদার মহাশয় জানিয়েছেন, পূর্বে যে শিব মন্দির ছিল এই স্থানে সেখানে শিবলিঙ্গের কিছুটা অংশ মাটির নিচে ছিল এবং কিছুটা অংশ মাটির উপরে ছিল। যার ফলে মাটির খননের সাথে সাথে প্রাচীন শিবলিঙ্গ বেরিয়ে এসেছে। শুধু তাই না, মন্দিরের বর্তমান পুরোহিত সন্তোষ বটব্যাল বলেন, তার পূর্বপুরুষরা বহু আগে থেকে এই মন্দিরের পূজা করে আসছেন। তিনিও প্রথম থেকে শুনে আসছেন এই স্থানে পাতালেশ্বর ভৈরবনাথ অনাদিলিঙ্গ রয়েছে। যা সোমবার খননকার্যে প্রমাণ পাওয়া গেছে। আর এই নিয়ে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে জেলা তথা রাজ্য জুড়ে।