Tardigrade: বিজ্ঞানের ভাষায় এর নাম টার্ডিগ্রেড। তবে এর চলতি নাম জল ভালুক বা ওয়াটার বিয়ার। অনেকেই একে শেওলা শুকরছানা বলে থাকেন। তবে এক মিলিমিটারের চেয়েও ছোট দৈঘ্যের আট পেয়ে এই প্রাণীর জীবন ক্ষমতা শুনলে যে কেউ অবাক হবেন। বর্তমানে এর ১৫০০টি প্রজাতির খোঁজ মিলেছে পৃথিবীতে। তবে হাতে গোনা মাত্র কয়েকটা নিয়েই ভালো করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছে। এরই মধ্যে একটি নতুন প্রজাতির জল ভালুক নজর কেড়েছে বিজ্ঞানীদের। মানুষের জন্য যে তেজস্ক্রিয় রশ্মি প্রাণহানির কারণ হতে পারে তার চেয়ে ১০০০ গুণ বেশি বিকিরণ সহ্য করতে পারে এই প্রাণীর এমনটাই মনে করা হচ্ছে। আর এই তথ্য সামনে আসার পর থেকেই আগ্রহ বেড়েছে বিজ্ঞানীদের।
বিজ্ঞানীদের তরফে এই টার্ডিগ্রেডের নতুন প্রজাতিটির জিনোম সিকোয়েন্স পরীক্ষা করে গত ২৪শে অক্টোবর কয়েকটি তথ্য সামনে আনা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে এই জীবের এমন কিছু জিন চিহ্নিত করা গিয়েছে যেগুলো তেজস্ক্রিয় বিকিরণ পেয়ে ধ্বংস না হয়ে আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে গবেষকরা মনে করছেন এর জিন এতটাই আপডেটেড যে এর ইমিউনিটি পাওয়ার খুব শক্তিশালী। আশা করা যাচ্ছে এই নতুন প্রজাতির জল ভালুক (Tardigrade) নিয়ে গবেষণা করলে মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে মহাকাশচারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে নতুন পথ খুলে যাবে এছাড়া ক্যান্সারের মতো মারণ রোগের চিকিৎসাতেও বড় পরিবর্তন আনতে পারে এই জীব।
চীনে সম্প্রতি খুঁজে পাওয়া এক প্রজাতির জল ভালুকের (Tardigrade) অপ্রতিরোধ্য জিন প্রথম অবাক করে বিজ্ঞানীদের। দেখা যায় তেজস্ক্রিয় বিকিরণ সহ্য করে পুনরায় কিছু জিন সক্রিয় হয়ে উঠেছে। যদি কোনো মানুষকে এই একই পরিমাণ তেজস্ক্রিয় বিকিরণ দেওয়া হয় তবে তার মরণ অনিবার্য ছিল। জানা যাচ্ছে TRID1 নামের টার্ডিগ্রেডের শরীরের ক্ষত মেরামত করার জন্য একটি বিশেষ ধরনের প্রোটিন ব্যবহার করে তাই মানুষের শরীরের চিকিৎসার ক্ষেত্রে এই বিশেষ প্রজাতির জীবকে ব্যবহার করার উপায় ভাবছে বিজ্ঞানীরা।
আরো পড়ুন: ভারতীয়দের পৃথিবীর সব দেশে, তবুও এই দেশগুলোতে ভারতীয়দের বসবাস শূন্য
চরম প্রতিকূলতায় এদের এই জীবন শক্তি দেখে বিজ্ঞানীদের একাংশ দাবি করছেন এরই হয়তো পৃথিবীর একমাত্র অমর প্রাণী। ১৭৭৭ সালে লাজারো স্প্যালঞ্জিনি প্রথম এই প্রাণীদের নামকরণ করেন টার্ডিগ্রেড (Tardigrade) যার অর্থ শ্লথ গতিসম্পন্ন প্রাণী। এই জলে বসবাসকারী প্রাণী খাবার ও জল ছাড়া বেঁচে থাকতে পারে ৩০ বছর। এছাড়া ১৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রা থেকে শুরু করে ২৭২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হিমাঙ্কেও এরা বেঁচে থাকতে পারে। তীব্র চাপে বা চাপশূন্য অবস্থাতেও এরা বেছে থাকতে পারে বছরের পর বছর।
এর জীবন শক্তি পরীক্ষার জন্য ২০১৯ সালে চাঁদে পাঠানো হয়েছিল ইজরায়েলের একটি মহাকাশযানে করে। পরে যান্ত্রিক গোলযোগে সফল অবতরণে ব্যার্থ হয়ে মাটিতে ভেঙে পড়ে মহাকাশযানটি। এর ফলে চাঁদের মাটিতে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ হয়। বেশিরভাগ বিজ্ঞানীরা দাবি করেন ওইসব জল ভাল্লুকেরা এখনও দিব্যি বেঁচে রয়েছে চাঁদের বুকে। জানা যাচ্ছে আগামী ১০০০ কোটি বছর অনায়াসেই বেঁচে থাকতে পারবে এই জীবকুল। অর্থাৎ যতদিন সূর্য থাকবে পৃথিবী বা অন্য বসবাস যোগ্য গ্রহে বেঁচে থাকবে টার্ডিগ্রেডের মতো প্রাণীরা।