Iran: ইরানকে যুদ্ধে “হারানো সম্ভব নয়”, এই ধারণাটি বেশ জটিল এবং তা শুধু সামরিক শক্তির ওপর নির্ভর করে না, বরং ভূরাজনীতি, জনসাধারণের মনোভাব, ইতিহাস, ভূগোল, ও কৌশলগত অবস্থানের সঙ্গে যুক্ত। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ দেওয়া হলো কেন অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ইরানকে যুদ্ধে সহজে হারানো সম্ভব নয়:
ভূগোল ও ভৌগলিক কৌশল
- ইরান একটি পর্বতময় ও বিশাল ভূখণ্ডবিশিষ্ট দেশ (প্রায় ১৬ লাখ বর্গকিমি)। এটি সহজে দখল বা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।
- ইরান চারপাশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দেশ ঘিরে আছে (ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ইত্যাদি) এবং এটি হরমুজ প্রণালীর নিয়ন্ত্রক, যেখান দিয়ে বিশ্বের এক-পঞ্চমাংশ তেল পরিবাহিত হয়। এই প্রণালী বন্ধ করে বিশ্ব অর্থনীতিকে দারুণ ক্ষতি করতে পারে ইরান।
ইরানের (Iran) জনগণের দেশপ্রেম ও প্রতিরোধ শক্তি
- ইরানি জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবাদ ও ইসলামিক বিপ্লবের আদর্শ অনেক গভীরে প্রোথিত।
- আগ্রাসনের মুখে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে, যা অতীতে ইরান-ইরাক যুদ্ধেও প্রমাণিত হয়েছে।
অসম প্রতিরক্ষা কৌশল
- ইরান (Iran) সরাসরি যুদ্ধের বদলে গেরিলা যুদ্ধ, সাইবার আক্রমণ, ড্রোন হামলা ও প্রক্সি মিলিশিয়া (যেমন হিজবুল্লাহ, হুথি বিদ্রোহী, পিএমইউ) ব্যবহার করে।
- এর ফলে বড় শক্তির দেশও সরাসরি সফল হামলা চালিয়ে ফল পায় না।
সামরিক সক্ষমতা ও স্বনির্ভরতা
- ইরান অনেক সামরিক প্রযুক্তি নিজে তৈরি করে, যেমন ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র, সাবমেরিন, রাডার ইত্যাদি।
- তাদের হাতে রয়েছে মাঝারি ও দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র যা প্রতিবেশী দেশ এমনকি মার্কিন ঘাঁটি পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম।
আরও পড়ুন: প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আমেরিকায়, কোন কোন এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত
কূটনৈতিক ও আঞ্চলিক প্রভাব
- ইরান, ইরাক, সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেনসহ অনেক দেশে প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে।
- যদি কেউ ইরানের (Iran) বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে, ইরান পুরো অঞ্চলজুড়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
অভিজ্ঞতা ও ইতিহাস
- ইরান ১৯৮০-৮৮ সালের ইরান-ইরাক যুদ্ধের মতো দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সামলেছে।
- তারা যুদ্ধ কৌশলে দক্ষ ও স্থিতিশীল, যার ফলে তারা দীর্ঘমেয়াদে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।
উপসংহার
ইরানকে (Iran) পরাজিত করা শুধু সামরিক হামলা দিয়ে সম্ভব নয়, কারণ তারা ভূগোল, জাতীয় ঐক্য, প্রযুক্তি, ও কৌশলগত পদ্ধতিতে প্রতিরোধ গড়ার জন্য প্রস্তুত। কোনো দেশ চাইলে হয়তো বড় ক্ষয়ক্ষতি করতে পারে, কিন্তু পুরোপুরি “হারানো”, অর্থাৎ সরকার পতন, সামরিক পরাজয় ও অঞ্চল দখল, এসব একসঙ্গে ঘটানো অত্যন্ত কঠিন।