Kolaghat Thermal Power Station: ভেঙে ফেলা হলো কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২টি চিমনি, নেপথ্যে কোন কারণ?

Kolaghat Thermal Power Station: বর্তমানে পরিবেশের সবথেকে বড় সমস্যা হলো দূষণ। দূষণের কারণে মানবসভ্যতা ক্রমশ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে চলেছে। প্রযুক্তির যত উন্নতি হচ্ছে পরিবেশে দূষণের মাত্রা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। দূষণের জেরে আগেই বন্ধ করা হয়েছিল কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম দফার ১ ও ২ নম্বর ইউনিট। কিন্তু এবার দূষণের মাত্রা অতিরিক্ত পরিমাণে বৃদ্ধি হওয়ার কারণে ভেঙে ফেলতে হলো আরো দুটি চিমনি। ফলে পূর্ব মেদিনীপুরের প্রবেশদ্বারে এবার দেখা যাবে ৬টির বদলে ৪টি চিমনি।

কেন নিতে হলো ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত?

কোলাঘাট থার্মল পাওয়ার স্টেশন (Kolaghat Thermal Power Station) এতদিন পর্যন্ত ছিল পূর্ব মেদিনীপুরের প্রবেশ দ্বার। কোলাঘাট বলতে সাধারণ মানুষ এককথায় একেই বুঝতো। পাশাপাশি সকলেই ল্যান্ডমার্ক হিসাবে কিন্তু থার্মল পাওয়ারের ৬টি চিমনিকেই। তবে ইতিহাস বদলে গেল আজ থেকেই। এখন থেকে আর এই চিমনি দেখতে পাওয়া যাবে না। কারণ, বিদ্যুৎ দফতরের পক্ষ থেকে আজ দুটি চিমনি ভেঙে ফেলা হল। এখন থেকে ৬টির বদলে ৪টি চিমনি থাকবে কোলাঘাট থার্মল পাওয়ার ইউনিটে। কি কারনে নিতে হল এত বড় পদক্ষেপ? বিস্তারিত উত্তর জানবেন আজকের এই প্রতিবেদনে।

কবে প্রথম উদ্বোধন করা হয় এই চিমনিগুলো (Kolaghat Thermal Power Station)?

কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের (Kolaghat Thermal Power Station) প্রথম পর্যায়ের তিনটি ইউনিটের উদ্বোধন করেছিলেন ১৯৮৪ সালে রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। ১৯৯২ সালে দ্বিতীয় পর্যায়ের চার,পাঁচ, ছয় এই তিনটি ইউনিট চালু হয়। ২১০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার ক্ষমতা ছিল প্রতি ইউনিটে। একসময় প্রতিদিন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে মোট ১২৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপন্ন হত। প্রায় ১২ হাজার মেট্রিক টন কয়লা লাগত প্রত্যেকদিন এত বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য। যেহেতু কয়লা পুড়িয়ে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র চলত তাই প্রতিদিন প্রায় ৬ থেকে ৭ হাজার মেট্রিক টন ছাই উৎপন্ন হত কেন্দ্রটিতে।

যেখানে দহন বেশি সেখানে দূষণ হবে না তা তো হতেই পারে না। এত পরিমাণ কয়লা যেহেতু প্রত্যেক দিন বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহার করা হতো তাই তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে (Kolaghat Thermal Power Station) থেকে নির্গত হত বিপুল পরিমাণ ছাই। এই অতিরিক্ত মাত্রার দূষণের কারণে কোলাঘাট, মেচেদা সহ পার্শ্ববর্তী পূর্ব মেদিনীপুর ও হাওড়া জেলার প্রায় ৫০০ বর্গ কিমি এলাকা ভয়াবহ দূষণের শিকার হত কয়েক বছর আগে। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে গেলে এই দূষণ নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

আরও পড়ুন: নয়ারূপে সেজে উঠছে নিউটাউন, যানজট সামলাতে তৈরি হচ্ছে নতুন ৬টি আন্ডারপাস?

ভুগতে হয় সাধারণ বাসিন্দাদের

বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে নির্গত ছাই এক বিরাট আকারের দূষণের চেহারায় নেয়। দূষণের প্রতিকার চেয়ে এলাকার ভুক্তভোগী বাসিন্দারাসহ একাধিক সংগঠন লাগাতার আন্দোলনের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদে অভিযোগ জানায়। অভিযোগ জানানো হয় গ্রীন বেঞ্চে। গ্রীন বেঞ্চ এর আগে জরিমানা করেছে এবং যার জন্য তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র (Kolaghat Thermal Power Station) কর্তৃপক্ষের কয়েক দফায় প্রায় এক কোটি টাকা দিতে হয়েছে।

দেওয়া হয় কঠোর নির্দেশ

কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ৬ টি ইউনিটেই অতি আধুনিক ছাঁকনি যন্ত্র (ইলেট্রো স্ট্যাটিক প্রেসিপিটেটর অর্থাৎ ই.এস.পি.) বসিয়ে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করতে হবে এই ছাই। ওই নির্দেশের পর তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র (Kolaghat Thermal Power Station) কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় দফার তিনটি ও প্রথম দফার তৃতীয় চিমনির মুখে আধুনিক ই.এস.পি মেশিন বসালেও পুরানো মডেলের তৈরি ১ম দফার প্রথম ও দ্বিতীয় চিমনি কোনভাবেই সম্ভব হয়নি আধুনিকীকরণ করার। সেই কারণেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ওই দুটি চিমনিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রাখতে হবে। রাজ্যের অন্যান্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে কম উৎপাদন খরচে বিদ্যুৎ পরিমাণমতো উৎপাদন করার কারণে ডব্লিউ বি পি ডি সি এল কর্তৃপক্ষ এই কেন্দ্রের প্রথম দফার দুটি ইউনিটে কয়েক বছর ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রাখে। বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ সব মিলিয়ে গত কয়েক মাস আগে এক ও দু নম্বর ইউনিটের বয়লার ভেঙে ফেলার পর, অবশেষে আজকে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় চিমনি দুটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *