Remedies for Pimples: পুজোর আগেই করুন উপায়গুলি, পান ব্রণ থেকে চটজলদি মুক্তি

ব্রণ ত্বকের একটি সাধারণ সমস্যার বিষয়। মূলত বয়সন্ধিকালে কিশোর-কিশোরীরা ব্রণের সমস্যায় বেশি ভুগে থাকে। তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় বয়সন্ধি পার হয়ে যাওয়ার পরেও মুখে ব্রণের সমস্যা থেকে যায়। সেক্ষেত্রে মুখে অবাঞ্ছিত ব্রণ দূর করার প্রতিকারের জন্য চেষ্টা করা আবশ্যক। বেশিদিন ধরে ত্বকের উপর ব্রণ থাকলে তা যেমন ত্বকের সাধারণ সৌন্দর্যকে ব্যাঘাত ঘটায়, তেমনি অনেক ক্ষেত্রে মুখে দাগের সৃষ্টি করে। যা মানুষকে আত্মবিশ্বাসের অভাবেও ভোগায়। তাই বহু মানুষের মধ্যে একটা প্রশ্নই ঘোরাফেরা করে, আর তা হল – মুখে ব্রণ হলে কি মাখা উচিত (Remedies for Pimples)!

যাদের তৈলাক্ত ত্বক তারাই ব্রণের সমস্যায় বেশি ভোগেন। তবে ত্বক তৈলাক্ত না এমন লোকজন যে ব্রণের সমস্যা দেখা যায় না, তা নয়। মুখে ব্রণের সমস্যা নিয়ে জেরবার (Remedies for Pimples) এমন মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। ব্রণ দূর করার জন্য মানুষের কসরতের শেষ নেই। নানা রকম দামি কসমেটিক থেকে শুরু করে ঘরোয়া টোটকা, কোনটাই বাদ যায় না। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

তাই আমাদের এই ব্লগে, দীর্ঘদিনের হোক বা স্বল্প দিনের ব্রণ, দূর করার উপায় হিসেবে জন্য রইল কিছু অসাধারণ টিপস, যা আপনার যথেষ্ট উপকারের আসতে পারে।

প্রথম জিজ্ঞাস্য বিষয়টি হলো – মুখে ব্রণ হলে কি মাখা উচিত?

মুখে ছোট ছোট ফুসকুড়ি বা ব্রণ হলে প্রথমেই চিন্তা আসে যে কি মাখলে থেকে ঝটপট ছুটকারা পাওয়া যাবে। তাই রইল কিছু উপায়।

  • মুখে ব্রণ কমানোর উপায় হিসেবে সর্বপ্রথমে মাথায় রাখতে হবে যে, যতটা সম্ভব সময় ত্বক পরিষ্কার রাখতে হবে। তাই রাতে শোয়ার আগে সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং স্নানের সময় খুব ভালোভাবে মুখ ধোয়া উচিত।
  • খুব ভালোভাবে ত্বক পরিষ্কার করলে ত্বকের স্পোরগুলো ওপেন হয়ে যায়। তাই মুখ ধোয়ার পর বারবার মুখে ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিতে হবে। এটি ন্যাচারাল টোনারের কাজ করে।
  • মুখ ধোয়ার পর অবশ্যই কোনো ভালো মানের মশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। প্রাকৃতিকভাবে মশ্চারাইজার হিসেবে নারকেলের তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও মধু ও গ্লিসারিন মিশিয়েও ত্বকের উপর লাগালে তা মশ্চারাইজারের কাজ করে।
  • যাদের ঘরের বাইরে কাজ করতে হয় তাদের দিনের বেলা বাইরে বেরোনোর সময় সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। এতে ত্বক যেমন সূর্যের হাত থেকে বাঁচবে তেমনি ব্রণগুলো বাড়তে পারবে না। তবে খেয়াল রাখতে হবে সানস্ক্রিন যেন এসপিএফ ৩০ উপরে না হয়।
  • ব্রণও যদি বেশ বড় বড় গোটা গোটা, লালচে ভাব বা যন্ত্রণাদায়ক হয়ে থাকে তাহলে ব্রণের উপর বরফ ঘষলেও বেশ উপশম পাওয়া যায়। তবে ব্রণ যদি বড় হয়ে পেকে গিয়ে থাকে সেক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক, রেটিনয়েডজাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে।
  • কপালে ছোট ছোট ব্রণ দূর করার উপায় হিসেবে নিম পাতা ভীষণ উপকারী। ব্রণ হলে বেশ কিছু ঘরোয়া প্যাক ইউজ করা যেতে পারে। যেমন নিম পাতা ও কাঁচা হলুদ একত্রে বেটে ব্রণের উপর লাগানো যেতে পারে। অথবা মুলতানি মাটি এবং জল একত্রে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও মুলতানি মাটি জল এবং চন্দন দিয়ে তৈরি ফেসপ্যাক ও ব্রণের জন্য বেশ কার্যকরী।
  • এছাড়া ব্রণের সমস্যা থেকে নিস্তার পেতে গুঁড়ো চন্দন লেবুর রসের সাথে মিশিয়েও ব্যবহার করা যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে চুন লাগালেও ব্রণ ও কমতে দেখা যায়। ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে মুলতানি মাটি ও পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্রণের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চুন ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • ব্রণের সমস্যা বেশ বড় আপার ধারণ করলে কিছু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল যেমন চায়ের লিকার, কফির গুঁড়ো, অ্যালোভেরা, আপেল সিডার ভিনেগার, কাঁচা হলুদ, মালবেরি এক্সট্রাক্ট, ভিটামিন সি এবং নিমের মতো উপাদান সমৃদ্ধ পণ্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

ব্রণ দূর করার উপায় আরো কি কি আছে জেনে নেওয়া যাক:

মুখে ছোট ছোট দানা দূর করার উপায় জানতে হলে আগে খাদ্যাভ্যাসের উপর নজর দেওয়া বিশেষভাবে জরুরি। যারা দীর্ঘকালীন সময় ধরে ব্রণের সমস্যায় ভুগছেন তাদের খাওয়া-দাওয়ার উপর নজর দিতে হবে। ফাস্টফুড খাওয়া বা অতিরিক্ত মসলা জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়াও এমন খাবার খেতে হবে যা পেট পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিনের মতো পেট পরিষ্কার না হলে বা গ্যাসের সমস্যা থাকলে মুখে ব্রণও দেখা যেতে পারে।

  • রোজকার খাবারে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান আছে এমন খাবার বেশি রাখতে হবে। যেমন দই, আখরোট, কুমড়ো, বেরিজাতীয় ফল, কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল খেতে হবে।
  • শুধু পেট পরিষ্কার নয় লিভার ভালো থাকবে এমন ধরনের খাবার খাওয়াও বেশ জরুরী কারণ লিভার খারাপ হলেও বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যে মানুষ ব্রণের সমস্যায় ভুগে থাকেন। এর পাশাপাশি রাত জাগা বন্ধ করতে হবে। রাতে ঘুম না হওয়া বা বেশি রাত করে ঘুমোতে যাওয়ার কারণেও ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়।
  • অতিরিক্ত দূষণযুক্ত এলাকায় বা ক্ষেত্রে কাজ করতে হলে অনেক ক্ষেত্রে ব্রণের সমস্যা এসে যায়। তাই এর হাত থেকে বাঁচতে খানিক সময় অন্তর মুখ পরিষ্কার করে আসতে হবে। খুব বেশিক্ষণ ধরে কম্পিউটার, মোবাইলের ব্লু স্ক্রিনের সামনে থাকলেও ব্রণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এই বিষয়গুলোতেও বিশেষভাবে নজর দেওয়া প্রয়োজন।

সর্বোপরি ব্রণের সমস্যা খুব বাড়াবাড়ি আকার ধারণ করলে অবশ্যই একজন ডাক্তার বা স্কিন স্পেশালিস্ট বা কোন বিউটিশিয়ানের সঙ্গে কনসাল্ট করা প্রয়োজন।

মুখে ব্রণ থাকলে যে সমস্ত কাজ করা যাবে না সেগুলি হল-

  • মুখে ব্রণ থাকলে ফেসিয়াল করার বা মুখে স্ক্রাবিং করা বন্ধ রাখতে হবে। অনেকের আবার মুখের ব্রণ আঙ্গুল দিয়ে খোটার স্বভাব রয়েছে।
  • অন্য কারো ব্রণ রয়েছে এমন মানুষের মুখ স্পর্শ এড়িয়ে চলুন। এমনটা করলে ব্যাকটেরিয়া এবং অমেধ্য স্থানান্তরিত হতে পারে।
  • অন্য কারো বালিশের তোয়ালে, গামছা বা রুমাল ব্যবহার করবেন না।
  • চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে সস্তার কোন পণ্য এনে মুখে ব্যবহার করবেন না। এক্ষেত্রে অবশ্যই কোন একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেবেন।

মুখে ছোট ছোট দানা দূর করার কিছু ঘরোয়া উপায়

  • তুলসী পাতার পেস্ট বানিয়ে তার সাথে বেসন ও মধু মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করে নিতে পারেন। এই ফেসপ্যাকটি সপ্তাহে তিনবার ব্যবহার করতে পারেন।
  • তুলসী পাতা, নিম পাতা, কাঁচা হলুদ একত্রে বেটে এক চামচ লেবুর রসের সাথে মিশিয়ে তা মুখে ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • এক চামচ পাতিলেবুর রস, এক চামচ গরম জলের সাথে মিশিয়ে তুলো দিয়ে আলতো করে ত্বকের উপর ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • নারকেল তেল একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাক্টিরিয়াল এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটারি। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন কে থাকে। তাই ব্রণের কালো দাগ দূর করতে নারকেল তেল দারুণ ভাবে কাজ করে।
  • এক চামচ শুকনো তুলসি পাতার গুঁড়োর, এক চামচ ওটসের গুঁড়োর সাথে এক চামচ কাঁচা দুধ মিশিয়ে ব্রণের উপর লাগালে ভালো উপকার দেয়।
  • মুখে ব্রনের দাগ হয়ে গেলে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে গেলে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই এবং ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে।

আশা করছি মুখে ব্রণ হলে কি মাখা উচিত বা ব্রণ দূর করার উপায় (Remedies for Pimples) এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর আজকের এই প্রতিবেদন থেকে আপনারা পেয়ে যাবেন। আমাদের এই প্রতিবেদনে যে সমস্ত টিপস শেয়ার করা হয়েছে তা বেশিরভাগই ঘরোয়া পদ্ধতিতে করা যায় এমন উপায়। যার ফলে আপনাদের খুব বেশি টাকা-পয়সা খরচ হবে না। তাছাড়া এই ঘরোয়া পদ্ধতিগুলি ধৈর্য ধরে ব্যবহার করলে আশানুর ফল নিশ্চিতরূপে পাওয়া সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *