বলা হয়ে থাকে যে, একজন উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনও বয়স লাগেনা। এর জন্য যা প্রয়োজন তা হল নতুন কিছু করার সাহস এবং নিজের জীবনের পাশাপাশি অন্যদের জীবনে মূল্য যোগ করার প্রবণতা। তাই যখন ৮০ বছর বয়সে বেশিরভাগ মানুষ বিছানায় শুয়ে কাটায়, নানা রোগে ভোগে, তখন পশ্চিমবঙ্গের তুফানগঞ্জের ৮০ বছর বয়সী এক বৃদ্ধা মহিলা, একটি খাবারের দোকান চালান। তিনি এলাকায় ‘সিঙ্গারা দিদা’ (Samosa Dida) নামে পরিচিত। তার অবিরাম ধৈর্য এবং মুখে আনন্দের হাসির জন্য সবাই তাকে ভালোবাসে, কারণ তিনি গরম এবং ধুলোর মধ্যে একের পর এক সিঙ্গারা তৈরি করেন।
সুরবালা মন্ডলের দোকানটি আসলে সকলের জন্য অনুপ্রেরণার কারণ। একজন বৃদ্ধা প্রায় একাই সবটা পরিচালনা করছেন, বরং আজকের বিশ্বে যখন বেশিরভাগ খাবারের দাম আকাশছোঁয়া এবং সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে, তখন তিনি তার সুস্বাদু খাবার খুব কম দামে দিচ্ছেন। তার দোকানে তার হাতে বানানো জনপ্রিয় সিঙ্গারা সহ বিভিন্ন ধরণের খাবার পাওয়া যায়। সিঙ্গারা দিদা তার সুস্বাদু সিঙ্গারার দাম মাত্র ২.৫ টাকার মতো রেখেছেন! সিঙ্গারাগুলি বিপুল পরিমাণে বিক্রি হয়। গত ৩৫ বছর ধরে হাসিমুখে ‘সিঙ্গারা দিদা’ (Samosa Dida) তেলে ভাজা বানিয়ে নিজের সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন।
সর্বোপরি, কাউকেই দোকান থেকে ক্ষুধার্ত অবস্থায় ফিরিয়ে যেতে দেন না। তিনি স্বীকার করেছেন যে, এই বয়সেও, তিনি দোকানে কাজ করতে ক্লান্ত হননা। বরং, সিঙ্গারা দিদা নিজের বেশ ভালোবেসেই কাজটা করেন। সন্ধ্যা হলেই খাদ্যপ্রেমীরা সিঙ্গারা এবং অন্যান্য খাবার কিনতে তার দোকানে ভিড় জমান। তিনি নিজের হাতে সিঙ্গারা বানান কারণ তার কাছে সুস্বাদু মশলাদার আলুর তরকারি তৈরির একটি গোপন রেসিপি আছে।
আরও পড়ুন: সন্তানের ১০ বছর বয়স আগেই শেখান এই ৯ গুণ, পিতামাতা হিসেবে গর্ব হবে আপনারও
স্থানীয় বাসিন্দা মানসী মণ্ডল বলেন যে, এই বয়সেও তিনি দোকানটি চালাচ্ছেন এবং এটি তাদের শহরের সকল মহিলাদের জন্য এক বিরাট অনুপ্রেরণা। তিনি নাকি কখনও দিদাকে অসুস্থ বা অনুপস্থিত থাকতে দেখিনি, এমনকি ছুটির দিনেও তিনি নিরলসভাবে কাজ করেন। তার সাহস এবং উৎসাহ ছাড়াও, সবচেয়ে আকর্ষণীয় জিনিস হল সিঙ্গারা। দাম মাত্র আড়াই টাকা কিন্তু স্বাদ অসাধারণ। সকলকে প্রতিদিন তিনি যত্ন সহকারে সিঙ্গারা তৈরি করেন খাওয়ান।
স্থানীয়রা তার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে চলেছে এবং তার দোকানের খবর তুফানগঞ্জ মহকুমার বাইরেও পৌঁছে গেছে। মনে হচ্ছে পুরো কোচবিহার এখন ‘সিঙ্গারা দিদা’ (Samosa Dida) সম্পর্কে জানে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ সিঙ্গারা খেতে এবং এই অনুপ্রেরণাদায়ক মহিলার সাথে দেখা করতে আসে এমন ঘটনা বিরল নয়। তিনি সর্বদা সবাইকে হাসিমুখে স্বাগত জানাতে থাকেন এবং কেউ কেউ এমনকি বলেন যে যদি কোনও শিশু টাকা ছাড়া তার দোকানে আসে, তবে তিনি মাঝে মাঝে বিনামূল্যে তাদের খাবার দেন। যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে তিনি এই বয়সে দিনরাত এত কঠোর পরিশ্রম করেন, কারণ তাকে তার পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করতে হয়। তিনি রান্না করতে এবং মানুষকে খাওয়াতে ভালোবাসেন। আর তিনি এই কাজ শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত কাজ করে যাবেন।