Subhanshu Shukla: ফ্লোরিডাতে সূর্যাস্ত হয়ে গেছে অনেক আগেই। নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টারের ভেহিকল অ্যাসেম্বলি বিল্ডিংয়ের বাইরে দাঁড়ানো দু’টি টেসলার মডেল এক্স এসইউভিতে করে রওনা দিল চার মহাকাশচারী। গাড়িতে কিন্তু সম্পূর্ণ চালকবিহীন এবং এর গন্তব্য লঞ্চপ্যাড। রাত পৌনে ১টা নাগাদ কোয়ারেন্টাইন ভেঙে ‘ড্রাগন ক্যাপসুলে’র দিকে এগিয়ে গেলেন চার মহাকাশচারী। সাক্ষী হয়ে রইলো গোটা বিশ্ব।
মহাকাশের উদ্দেশ্যে অবশেষে রওনা
মহাকাশচারীদের পরনে ছিল দুধসাদা পোশাক-হেলমেট। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে কাউন্টডাউন যেন একদম বন্ধ করা পরিবেশ। স্পেসএক্স অ্যাক্সিয়ম-৪ মিশন অপারেটররা সঙ্কেত দিয়ে দিয়েছেন যাওয়ার জন্য। ফ্যালকন ৯ রকেটে কেরোসিন-লিকুইড অক্সিজেন প্রপেল্যান্ট ভরার কাজ শুরু হয়ে গেছে অবশেষে। যে চারজন মহাকাশচারী মহাকাশের উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন তারা ‘ড্রাগন ক্যাপসুলে’র ভিতরে নির্দিষ্ট আসনে বসে স্ট্র্যাপ আটকে নিলেন। বন্ধ হয়ে গেল ড্রাগনের হ্যাচ। শুধুমাত্র ভারত নয় অপেক্ষা করছে গোটা বিশ্ব। কাউন্টডাউন শূন্যে পৌঁছনোর আগেই চালু হয়ে গেল ফ্যালকন ৯-এর ন’টি মেরিন ইঞ্জিন। নিমেষের মধ্যেই মহাকাশের উদ্দেশ্যে ছুটে গেল ‘ড্রাগন’।
ভারতীয় (Subhanshu Shukla) মহাকাশে ৪১ বছর পর
লখনউয়ের ছেলে শুভাংশু শুক্লা (Subhanshu Shukla) দীর্ঘ ৪১ বছর পর আবার ইতিহাস গড়লেন মহাকাশে। রাকেশ শর্মার উত্তরসূরি হিসেবে নিজের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে ফেললেন ইন্ডিয়ান এয়ারফোর্সের এই গ্রুপ ক্যাপ্টেন। মিশন সফল হলে শুভাংশুই হবেন আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে যাওয়া প্রথম ভারতীয়। গোটা দেশ এখন তাকিয়ে রয়েছে তার দিকেই।
আরেক ভারতীয়র কাহিনী
ভারতীয় বায়ুসেনার তরুণ স্কোয়াড্রন লিডার রাকেশ শর্মা ৪১ বছর আগে কাজাখস্তানে এক হিমশীতল ভোরবেলায় এমনই এক মহাকাশযানে পা রেখেছিলেন। সয়ুজ টি-১১ মহাকাশযানে বসে সিটের নীচে দুলুনি প্রথমবার টের পেয়েছিলেন। তিনি নিমেষের মধ্যেই পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ পেরিয়ে পৌঁছে গেছিলেন মহাশূন্যে। ভারতীয় বায়ুসেনা ক্যাপ্টেন (Subhanshu Shukla) সেই একই কম্পন অনুভব করলেন ৪১ বছর পর। যার জন্ম রাকেশ শর্মার অভিযানের ঠিক পরের বছর, ১৯৮৫।
আরও পড়ুন: ফ্রান্সের সংস্থার সঙ্গে বড় চুক্তি, রাফাল যুদ্ধবিমান তৈরি হবে দেশেই
দেশের উদ্দেশ্যে শুভ্রাংশুর (Subhanshu Shukla) বার্তা
বুধবার ভারতীয় সময় দুপুর ১২টা ১ মিনিটে আর ফ্লোরিডায় রাত ২টো ৩১ মিনিটে সফল উৎক্ষেপণ হওয়ার পর আবারো ফিরে আসলো সেই পুরনো স্মৃতি। উৎক্ষেপণের ১০ মিনিটের মধ্যেই পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করতে শুরু করে শুভাংশুর (Subhanshu Shukla) মহাকাশযান ড্রাগন স্পেসক্র্যাফ্ট। দেশবাসীর উদ্দেশে হিন্দিতে বার্তা দিলেন ভারতীয় মহাকাশচারী—‘সকল দেশবাসীকে নমস্কার। ভারত সফলতা লাভ করল ৪১ বছর পর। সূত্রপাত হলো ভারতের গগনযান মিশনের।
ড্রাগন মহাকাশযান
ড্রাগন কিন্তু যাত্রা শুরুর আঠাশ ঘন্টা পরেই তার গন্তব্যে পৌঁছে যাবে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টে ৩০ মিনিট নাগাদ স্পেস স্টেশনে ডক করবে সেটি। ‘মিশন পাইলট’ শুভাংশু বাদ দিয়ে এই অভিযানে রয়েছে নাসার মিশন কমান্ডার পেগি হুইটসন, পোল্যান্ডের স্লাওস উজানানস্কি ও হাঙ্গেরির টিবর কাপু। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী ১৪ দিন মহাকাশে থাকবেন শুভাংশুরা। বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলবে। তবে শুভ্রাংশুর (Subhanshu Shukla) সঙ্গে রয়েছে তার পছন্দের ভারতীয় খাবার। উৎক্ষেপণের সময় তার ওপর নজর ছিল তার মার। এমনকী অভিযান শুরুর আগে রীতি মেনে ছেলেকে ভার্চুয়ালি ‘দই চিনি’ ও খাইয়েছেন। মাকে আশ্বস্ত করে তিনি বলেন খুব শীঘ্রই তিনি আবার ফিরে আসবেন। টানা সাতবার পিছিয়ে যাবার পর এবার সফলতা পেয়েছেন মহাকাশ অভিযান করার। তার উৎক্ষেপণ সফল হয়েছে। মহাকাশচারীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। শুভাংশুর মহাকাশযাত্রায় উচ্ছ্বসিত ভারতীয় বায়ুসেনাও।